ইরান: ইতিহাস ও ইসলামিক সংস্কৃতি

ইরান

এই পোষ্টে যা যা পাবেন

 🔹 ভূমিকা: ইরান—প্রাচ্য সভ্যতার আলো

ইরান, যাকে পূর্বে পারস্য বলা হতো, পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্রস্থল। ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয়, বরং বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। ইসলামী ইতিহাস, আধুনিক রাজনীতি, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব—সব মিলিয়ে ইরান একটি আলোচিত


🏛️ ইরানের প্রাচীন ইতিহাস: সভ্যতা, সাম্রাজ্য ও সংস্কৃতির শিকড়

ইরান—যা প্রাচীনকালে পরিচিত ছিল পার্সিয়া (Persia) নামে—বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্র। হাজার হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস, অসংখ্য রাজবংশের উত্থান-পতন, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিকাশ, এবং অগণিত যুদ্ধ ও বিজয়ের সাক্ষী এই দেশটি। এই নিবন্ধে আমরা ইরানের প্রাচীন ইতিহাসের দিকে এক নিবিড় দৃষ্টিপাত করবো।


🏺 ইরানের প্রাক-ইতিহাস ও প্রাচীন সভ্যতা

এই দেশের ইতিহাস শুরু হয় প্রায় ৭০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, যখন এই অঞ্চলে প্রথম কৃষিভিত্তিক সমাজ গড়ে ওঠে। আনাতোলিয়া ও মেসোপটেমিয়ার পাশাপাশি ইরানও ছিল মানব সভ্যতার শুরুর গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষ করে এলাম (Elam) অঞ্চলে প্রাচীন এলামাইট সভ্যতা গড়ে ওঠে, যার নিজস্ব ভাষা ও রাজতন্ত্র ছিল।

এলামাইট সভ্যতা ছিল একটি প্রভাবশালী সংস্কৃতি, যা প্রায় ২৭০০ বছর ধরে টিকে ছিল এবং পরে আকেমেনিডদের (Achaemenid) আগমনে মিশে যায়। খননকৃত নিদর্শনে প্রমাণ মেলে যে ইরানিরা তাম্র, লোহা ও সিরামিক ব্যবহার করত, এবং তাদের একটি উন্নত নগরসভ্যতা ছিল।


👑 আকেমেনিড সাম্রাজ্য (৫৫০–৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)

ইরানের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায় হলো আকেমেনিড সাম্রাজ্য। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সাইরাস দ্য গ্রেট (Cyrus the Great), যিনি পার্সিয়ান গোত্রগুলিকে একত্রিত করে একটি বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তিনি ৫৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিডিয়া, লিডিয়া এবং বাবিলন দখল করে বিশ্বের বৃহত্তম সাম্রাজ্যের সূচনা করেন।

আকেমেনিড সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল বর্তমান তুরস্ক, মিশর, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের অংশ পর্যন্ত। সাইরাস ছিলেন সহনশীল ও মানবিক শাসক, যিনি “Cyrus Cylinder” নামে পরিচিত এক প্রাচীন দলিলে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন—যা অনেক ইতিহাসবিদের মতে, মানবাধিকারের প্রথম লিখিত দলিল।

এরপর রাজা দারিয়ুস দ্য গ্রেট (Darius I)জার্কসিস (Xerxes) সাম্রাজ্যকে আরও সম্প্রসারিত করেন। দারিয়ুস প্রথমবারের মতো একটি সুসংগঠিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করেন, রাজপথ নির্মাণ করেন (Royal Road), এবং একটি সমন্বিত মুদ্রাব্যবস্থা ও কর আদায় পদ্ধতি প্রবর্তন করেন।


⚔️ গ্রিক-পার্সিয়ান যুদ্ধ ও সাম্রাজ্যের পতন

আকেমেনিড সাম্রাজ্য ও গ্রিক শহর-রাজ্যগুলোর মধ্যে যুদ্ধ দীর্ঘদিন ধরে চলেছিল। সবচেয়ে পরিচিত যুদ্ধগুলোর মধ্যে রয়েছে Battle of Marathon, Thermopylae, এবং Salamis। যদিও প্রথমে পার্সিয়ানরাই এগিয়ে ছিল, পরবর্তীতে গ্রিকদের সুশৃঙ্খল প্রতিরোধ ও কৌশলের কাছে আকেমেনিড বাহিনী পরাজিত হয়।

৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট পার্সিয়ান সাম্রাজ্য দখল করে নেন এবং পার্সেপোলিস শহর ধ্বংস করে দেন। এর মাধ্যমে আকেমেনিডদের শাসনের অবসান ঘটে।


🏛️ সেলেউসিড ও পার্থিয়ান সাম্রাজ্য (৩১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ – ২২৪ খ্রিস্টাব্দ)

আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর ইরানে সেলেউসিড সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে, যা মূলত গ্রিক সংস্কৃতি প্রভাবিত ছিল। এটি পারসিয়ানদের নিজস্ব সংস্কৃতির অনেকটাই চাপা দেয়। তবে কিছু শতকের মধ্যে পার্থিয়ানরা (Parthians) ক্ষমতায় আসে এবং ইরানি ঐতিহ্য ও ধর্মীয় রীতিনীতি পুনরুজ্জীবিত করে।

পার্থিয়ান সাম্রাজ্য ছিল রোমান সাম্রাজ্যের বিরোধী এক শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। এই সময় ঘোড়সওয়ার কৌশল, বাণিজ্যপথ (বিশেষত সিল্ক রোড), এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতা প্রসার লাভ করে।


👑 সাসানিয়ান সাম্রাজ্য (২২৪–৬৫১ খ্রিস্টাব্দ)

সাসানিয়ান সাম্রাজ্য ইরানের ইতিহাসে আরেকটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এই সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আর্দাশির প্রথম (Ardashir I)। তারা নিজস্ব পার্সিয়ান সংস্কৃতি, ধর্ম (জরথুস্ট্রবাদ বা Zoroastrianism), এবং প্রশাসনিক কাঠামো পুনরায় স্থাপন করে।

সাসানিয়ান যুগে ইরান ছিল শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও ধর্মের কেন্দ্র। রাজধানী কতেসিফোন (Ctesiphon) ছিল রোমানদের প্রতিদ্বন্দ্বী এক মহাশহর। বিখ্যাত পার্সিয়ান চিকিৎসক ও দার্শনিকরা এই সময়ে জন্মগ্রহণ করেন। তবে, সাসানিয়ানদের রোমান ও পরে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সঙ্গে ধারাবাহিক যুদ্ধ তাদের অনেকটা দুর্বল করে তোলে।


🕌 ইসলামের আগমন ও সাসানিয়ানদের পতন

৭ম শতাব্দীতে মুসলিম আরব বাহিনী ইরানে আগমন করে। ৬৫১ খ্রিস্টাব্দে সাসানিয়ান রাজা ইয়াজদেগার্দ তৃতীয় পরাজিত হন এবং এভাবে সাসানিয়ান সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে। এর মাধ্যমে ইরানে এক নতুন যুগের সূচনা হয়—ইসলামী যুগ, যা আবার একটি নতুন ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে ইরানের সমাজ ও রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন


🔖 অতিরিক্ত তথ্য (ফ্যাক্টস ইন বুলেট পয়েন্টে):

  • ইরান শব্দটি এসেছে “Aryānām” থেকে, যার অর্থ “আর্যদের দেশ”।

  • সাইরাস দ্য গ্রেট ছিলেন ইহুদি জাতির রক্ষাকর্তা হিসেবে পরিচিত।

  • পার্সেপোলিস শহর ছিল আকেমেনিডদের রাজকীয় রাজধানী, যা এখনও একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।

  • Zoroastrianism ইরানের নিজস্ব ধর্ম যা আগুন উপাসনার মাধ্যমে পরিচিত


🕌 ইরানের ইসলামি বিপ্লব: আধুনিক ইতিহাসের এক যুগান্তকারী অধ্যায়

এই দেশের ইসলামি বিপ্লব (Islamic Revolution of Iran) আধুনিক বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা, যা শুধু ইরান নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিম বিশ্বের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় বিশাল প্রভাব ফেলেছে। ১৯৭৯ সালে ঘটে যাওয়া এই বিপ্লবের ফলে ইরানে দীর্ঘদিনের রাজতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটে এবং একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সূচনা হয়। এই পোস্টে আমরা ইসলামি বিপ্লবের পটভূমি, কারণ, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং এর ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।


🔍 বিপ্লবের পটভূমি: শাহ শাসনের যুগ

ইরানে ১৯৪১ সাল থেকে রাজত্ব করছিলেন মোহাম্মদ রেজা পাহলভি, যিনি নিজেকে “শাহানশাহ” (রাজাদের রাজা) বলে দাবি করতেন। তাঁর শাসন আমলে ইরান পশ্চিমা দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হয়। যদিও শাহ দেশকে আধুনিকায়নের পথে এগিয়ে নেন (যেমন: নারী অধিকার, শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়ন), তবুও এই উন্নয়নের পেছনে ছিল চরম দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন এবং ইসলামী মূল্যবোধের অবমূল্যায়ন।


❗ বিপ্লবের প্রধান কারণসমূহ

১. ধর্মীয় অনুভূতির দমন

শাহ ইসলামি মূল্যবোধকে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির পেছনে ফেলে দিচ্ছিলেন। তিনি ইসলামি আলেমদের ক্ষমতা খর্ব করেন এবং ধর্মভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনেন।

২. সাভাক (SAVAK) নামক গোপন পুলিশ বাহিনী

এই বাহিনী বিরোধী মত দমন, নির্যাতন এবং নজরদারির মাধ্যমে জনমনে ভীতির সঞ্চার করে। জনগণের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়।

৩. অর্থনৈতিক বৈষম্য ও দুর্নীতি

দেশে একদিকে ছিল ধনী অভিজাত শ্রেণি, অন্যদিকে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগণের দারিদ্র্য। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের উপকারে আসেনি।

৪. উত্তেজিত ইসলামি নেতৃত্ব

সবচেয়ে বড় বিরোধী কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি, যিনি ইরান থেকে নির্বাসিত অবস্থায়ও ফ্রান্সে বসে জনমত গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। তাঁর বক্তব্য গোপনে ক্যাসেটের মাধ্যমে দেশে ছড়িয়ে পড়ে।


📅 বিপ্লবের প্রধান ধাপসমূহ

🔹 ১৯৭৮: বিক্ষোভের সূচনা

জানুয়ারিতে একটি সংবাদপত্রে আয়াতুল্লাহ খোমেনির বিরুদ্ধে অপমানজনক লেখা প্রকাশিত হলে তাবরিজ, কোম, তেহরানসহ নানা শহরে প্রতিবাদ শুরু হয়। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অনেক মানুষ নিহত হয়।

🔹 ১৯৭৮-এর শেষভাগ: ধর্মঘট ও জনজাগরণ

বিভিন্ন পেশাজীবী ও সরকারি কর্মচারীরা ধর্মঘটে অংশ নেয়। দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ে। মহরম মাসে (ইসলামের শোকের মাস) লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।

🔹 জানুয়ারি ১৯৭৯: শাহ দেশত্যাগ করেন

প্রবল গণচাপের মুখে শাহ মোহাম্মদ রেজা ইরান ত্যাগ করেন এবং চিকিৎসার অজুহাতে মিসর ও পরে যুক্তরাষ্ট্রে যান।

🔹 ফেব্রুয়ারি ১, ১৯৭৯: খোমেনির প্রত্যাবর্তন

আয়াতুল্লাহ খোমেনি ১৫ বছর নির্বাসনের পর বিজয়ীর মতো ইরানে ফিরে আসেন। লাখো মানুষ তাঁকে স্বাগত জানায়। তখন থেকেই দেশে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের দিকে যাত্রা শুরু হয়।

🔹 ফেব্রুয়ারি ১১, ১৯৭৯: পূর্ণ বিজয়

সেনাবাহিনীর একটি অংশ খোমেনির পক্ষে অবস্থান নেয় এবং শাহের বাকি অনুগত বাহিনী পরাজিত হয়। বিপ্লব চূড়ান্ত রূপ পায়।


🏛️ ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ঘোষণা

১৯৭৯ সালের এপ্রিল মাসে গণভোটের মাধ্যমে ৯৮% ভোটার ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পক্ষে মত দেয়। এরপর খোমেনিকে “সর্বোচ্চ নেতা” (Supreme Leader) হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। নতুন সংবিধানে ইসলামী শরিয়া আইনকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়।


⚖️ ইসলামি বিপ্লবের ফলাফল ও প্রভাব

✅ ইতিবাচক দিক:

  • ধর্মভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা চালু হয়, যা ইসলামি সমাজ ব্যবস্থার আদর্শ অনুসরণ করে।

  • সাম্রাজ্যবাদবিরোধী (anti-imperialist) মনোভাব ইরানের জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে গড়ে ওঠে।

  • ইরান স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের নীতি নির্ধারণে স্বাধীনতা অর্জন করে।

❌ নেতিবাচক দিক:

  • বিপ্লবের পরে বহু রাজনৈতিক বিরোধী ও প্রাক্তন রাজতন্ত্রীদের উপর দমন-পীড়ন শুরু হয়।

  • নারী অধিকার ও সামাজিক স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে পড়ে।

  • পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক তীব্রভাবে অবনতি ঘটে (বিশেষত ১৯৭৯ সালের তেহরান দূতাবাস জিম্মি সংকট)।

  • ইরান-ইরাক যুদ্ধ (১৯৮০-১৯৮৮) পরবর্তী সময়ে দেশটিকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করে তোলে।


🌍 বিশ্বরাজনীতিতে প্রভাব

ইরানের ইসলামি বিপ্লব মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। অনেক দেশেই ইসলামি আন্দোলনের উত্থান ঘটে এবং পশ্চিমা সমর্থিত সরকারগুলোর বিরুদ্ধে বিরোধী সুর চড়া হতে থাকে। সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলসহ অনেক রাষ্ট্র ইরানের নতুন সরকারকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে।যা আজও চলমান আছে।

ইরানের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা

নিচে ইরানের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা দেওয়া হলো:

ইরানের রাষ্ট্রপতির তালিকা (১৯৮০ – বর্তমান)
ক্রমিক নাম দায়িত্বকাল
আবুল হাসান বানিসাদর ১৯৮০–১৯৮১
মোহাম্মদ আলী রাজাই ১৯৮১
আলী খামেনি ১৯৮১–১৯৮৯
আকবর হাশেমি রাফসাঞ্জানি ১৯৮৯–১৯৯৭
মোহাম্মদ খাতামি ১৯৯৭–২০০৫
মাহমুদ আহমেদিনেজাদ ২০০৫–২০১৩
হাসান রুহানি ২০১৩–২০২১
ইব্রাহিম রাইসি ২০২১–২০২৪
মাসুদ পেজেশকিয়ান ২০২৪–বর্তমান

ইরানের মিত্র দেশসমূহ

মিডলইরানের কূটনৈতিক ও সামরিক মিত্র দেশসমূহ মূলত তাদের ভৌগোলিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ইরানের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র হলো রাশিয়া—যার সঙ্গে পারমাণবিক শক্তি, অস্ত্র ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে গভীর সহযোগিতা রয়েছে। চীন-ও ইরানের বড় মিত্র, বিশেষ করে বাণিজ্য ও জ্বালানি খাতে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়া, ইরাক, লেবাননের হিজবুল্লাহ, এবং ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ইরানের কৌশলগত অংশীদার বা মিত্র হিসেবে বিবেচিত। ইসলামি ভাবধারার আদান-প্রদান ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে ইরান এসব গোষ্ঠী ও রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার রেখেছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে, ইরান বিকল্প আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার কৌশল হিসেবে এই মিত্রদের ওপর নির্ভরশীল।

ইরানের শত্রু দেশসমূহ

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ইরানের কিছু স্পষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বী ও শত্রু রাষ্ট্র রয়েছে, যাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কূটনৈতিক উত্তেজনা, ধর্মীয় মতপার্থক্য ও আঞ্চলিক আধিপত্যের দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শত্রু রাষ্ট্র হলো যুক্তরাষ্ট্র, যার সঙ্গে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই সম্পর্ক তীব্রভাবে খারাপ। ইসরায়েলও ইরানের অন্যতম বড় শত্রু, বিশেষ করে পারমাণবিক কর্মসূচি, ফিলিস্তিন ইস্যু এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে। এছাড়া সৌদি আরব—যার সঙ্গে ইরানের ধর্মীয় (শিয়া-সুন্নি মতভেদ) ও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে, তাও দীর্ঘস্থায়ী শত্রুতার রূপ ধারণ করেছে। এই তিনটি রাষ্ট্র ছাড়াও পশ্চিমা জোটভুক্ত কিছু ইউরোপীয় দেশ ও আরব উপসাগরীয় কয়েকটি রাষ্ট্র ইরানের নীতির সমালোচক ও বিরোধী হিসেবে পরিচিত। ইরান এইসব শত্রু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা, প্রোপাগান্ডা ও আঞ্চলিক মিত্রতার মাধ্যমে পাল্টা অবস্থান তৈরি করেছে।

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতি

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ এখনো না ঘটলেও, তাদের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই চরম বৈরিতা ও শত্রুতাপূর্ণ। এই বৈরিতার মূল উৎস হলো আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার, ফিলিস্তিন ইস্যু, এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচি। ইসরায়েল মনে করে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি; অন্যদিকে ইরান ইসরায়েলকে “অবৈধ দখলদার রাষ্ট্র” হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানায়। ইরান লেবাননের হিজবুল্লাহ ও গাজায় হামাস-এর মতো গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে থাকে, যাদের ইসরায়েল সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে। সিরিয়া ও লেবাননের সীমান্ত এলাকায় ইসরায়েল প্রায়ই ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায়। এসব ঘটনা পরোক্ষ যুদ্ধের আবহ তৈরি করে। ২০২০-এর পর থেকে উভয় দেশের মধ্যে সাইবার আক্রমণ, গুপ্তচরবৃত্তি এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক সংঘাতে পক্ষ নেওয়ার মাধ্যমে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। ফলে ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব এখন শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করছে।

বর্তমানে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে ব্যাপকভাবে যুদ্ধ চলছে ( জুন ২০২৫)

ইরান থেকে ইসরায়েলের দূরত্ব

ভৌগোলিকভাবে ইরান ও ইসরায়েল সরাসরি প্রতিবেশী নয়, তবে তাদের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশি নয়। রাজধানী তেহরান থেকে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব পর্যন্ত সরাসরি আকাশপথে দূরত্ব প্রায় ১,৫০০ কিলোমিটার (প্রায় ৯৩০ মাইল)। যদিও এই দুই দেশের মধ্যে কোনো সরাসরি বিমান চলাচল বা সীমান্ত সংযোগ নেই, তবুও এই দূরত্ব সামরিক ও কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইরান যদি ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হামলার চেষ্টা করে, তাহলে এই দূরত্ব অতিক্রম করার সামর্থ্য তাদের প্রযুক্তিগতভাবে রয়েছে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায় অগ্রগতি অর্জনের পর। একইভাবে ইসরায়েলও ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর উপর নজর রাখে এবং দূরপাল্লার হামলা চালানোর সক্ষমতা ধরে রেখেছে। ফলে, এই ভৌগোলিক দূরত্ব স্বল্প হলেও দুই দেশের নিরাপত্তা ও কৌশলগত উত্তেজনার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইরানের আন্তর্জাতিক সীমান্ত যেসব দেশের সাথে রয়েছে

ইরান একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশ, যার অবস্থান পশ্চিম এশিয়ায়। দেশটির আন্তর্জাতিক স্থলসীমান্ত রয়েছে মোট ৭টি দেশের সাথে। উত্তরে ইরান সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, এবং তুর্কমেনিস্তান-এর সঙ্গে। পশ্চিমে রয়েছে তুরস্কইরাক, যা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বদিকে ইরানের সীমান্ত রয়েছে আফগানিস্তানপাকিস্তান এর সঙ্গে। এসব সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং মাঝে মাঝে নিরাপত্তা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জও দেখা দেয়। এছাড়া, ইরান দক্ষিণে পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগরের তীরে অবস্থিত হওয়ায় তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রসীমাও রয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে জ্বালানি পরিবহনে অত্যন্ত কৌশলগত ভূমিকা রাখে। ইরানের এই সীমান্ত পরিস্থিতি দেশটির ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

নিম্নে বাংলাদেশের ১ টাকায় ইরানের মুদ্রা ইরানি রিয়ালের (Iranian Rial) বর্তমান মান বিষয়ে একটি তথ্যভিত্তিক প্যারাগ্রাফ দেওয়া হলো:

বাংলাদেশের ১ টাকায় ইরানের রিয়ালের বর্তমান মান
২০২৫ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত, ১ বাংলাদেশী টাকা (BDT) প্রায় ৩৪৪–৩৪৫ ইরানি রিয়ালের (IRR) সমমূল্যে। উদাহরণস্বরূপ, XE ও Markets Insider–এর অনুসারে এক টাকার বিনিময়ে প্রায় ৩৪৪.৩৮ থেকে ৩৪৪.৫৬ রিয়াল পাওয়া যায় । Wise–এর তথ্য অনুযায়ী গত ৩০ দিনে এই রেট উচ্চ ও নিম্ন পর্যায় ছিল যথাক্রমে ৩৪৫.৬৭৯ ও ৩৪৩.৪১৮ । অর্থাৎ, বাংলাদেশী টাকার বিনিময়ে ইরানি রিয়ালের হার বেশির ভাগ সময়ই এই সীমার মধ্যে ওঠানামা করে।

এই রেটগুলি হলো মিড-মার্কেট রেট, যা সাধারণত মুদ্রা বিনিময় বা বিদেশি লেনদেনে ব্যবহৃত হয়—কিন্তু বাস্তবে কিছু প্রদানকারী (ব্যাংক বা এজেন্ট) অতিরিক্ত চার্জ বা স্প্রেড বসিয়ে থাকে। তাই সঠিক বিনিময় করতে চাইলে আপনাকে বর্তমান সময়ে উপযুক্ত মূল্য যাচাই করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।


ইরানের সরকারব্যবস্থা

ইরান একটি অনন্য ইসলামি প্রজাতন্ত্র, যার সরকারব্যবস্থা ধর্মীয় নেতৃত্ব ও গণতন্ত্রের সংমিশ্রণে গঠিত। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর দেশটি “ইসলামি প্রজাতন্ত্র” হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, যেখানে সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকে সর্বোচ্চ নেতা (Supreme Leader)-এর হাতে। এই পদে থাকা ব্যক্তি ধর্মীয়ভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং সেনাবাহিনী, বিচার বিভাগ, নিরাপত্তা সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখেন। এর পাশাপাশি ইরানে একটি নির্বাচিত সরকারব্যবস্থা রয়েছে, যার অধীনে প্রতি চার বছর পরপর রাষ্ট্রপতি (President) নির্বাচিত হন।

রাষ্ট্রপতি দেশের প্রশাসনিক প্রধান হলেও, নীতিগত ও সামরিক বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সর্বোচ্চ নেতাই নিয়ে থাকেন। এছাড়া রয়েছে একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ (Majles), যার সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। বিচার বিভাগ ও সংবিধান রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে গার্ডিয়ান কাউন্সিল, যারা প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে আইন শরিয়া অনুযায়ী হবে কি না তা নিরীক্ষণ করে। এই সরকারব্যবস্থা ইসলামি শরিয়া, শিয়া মতবাদ, ও আধুনিক রাষ্ট্র কাঠামোর সমন্বয়ে পরিচালিত হয়, যা বিশ্বে বিরল।

ইরানের রাষ্ট্রধর্ম ও শিয়া মতবাদ

ইরান বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে ইসলাম ধর্মের শিয়া মতবাদ রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষিত। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে ইরান নিজেকে একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় যে, ইরানের রাষ্ট্রধর্ম হলো ইসলাম (শিয়া, ইমামিয়া মতবাদ – দ্বাদশ ইমামবাদ)। এটি সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম বিশ্বের তুলনায় এক ব্যতিক্রমধর্মী অবস্থান।

শিয়া মতবাদ অনুসারে, ইসলামের প্রকৃত নেতৃত্ব খলিফাদের পরিবর্তে আহলে বাইত তথা নবী মুহাম্মদ (স.)-এর বংশধরদের হাতে থাকা উচিত ছিল। ইরানে প্রধানত “ইথনা আশারিয়া” বা দ্বাদশ ইমামবাদী শিয়া মতবাদ প্রচলিত, যা বিশ্বাস করে যে, মোট ১২ জন ইমামের ধারাবাহিক নেতৃত্ব ইসলামে বৈধ, এবং শেষ ইমাম (ইমাম মাহদি) এখন গায়েব (অদৃশ্য) অবস্থায় আছেন ও একদিন ফিরে আসবেন।

ইরানের রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও আইন-কানুন এই শিয়া মতবাদের আলোকে তৈরি। উদাহরণস্বরূপ, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা (Supreme Leader) হতে হলে তাকেও একজন শিয়া আলেম (মারজা) হতে হয় এবং তার ওপর শারঈ কর্তৃত্ব অর্পণ করা হয়। ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো, বিচারব্যবস্থা, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, এমনকি সেনাবাহিনীর আদর্শেও শিয়া চিন্তাধারার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

তবে ইরান শুধুমাত্র শিয়াদের দেশ নয়; দেশটিতে সুন্নি, খ্রিস্টান, ইহুদি, জোরোঅস্ট্রিয়ানসহ নানা ধর্মের সংখ্যালঘু বসবাস করে। যদিও সংবিধানে অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর অস্তিত্ব স্বীকৃত, তবুও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শিয়া মতবাদই সর্বোচ্চ প্রাধান্য পায়।

এই ধর্মীয় কাঠামো ইরানের কূটনীতি, সামরিক সম্পর্ক, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তার প্রভাব বিস্তারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইরাক ও সিরিয়ার শিয়া মিলিশিয়া, এবং ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের প্রতি ইরানের সমর্থন মূলত শিয়া সংহতির ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে


🔹 ইরানের ভূরাজনৈতিক অবস্থান

ইরান মধ্যপ্রাচ্যের একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ দেশ। পারস্য উপসাগর, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক, তুর্কমেনিস্তান ও আজারবাইজানের সঙ্গে ইরানের সীমানা রয়েছে।

🔥 ইরানের ভূরাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগ

  • সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সঙ্গে বৈরিতা

  • সিরিয়া ও ইরাকের রাজনৈতিক ইস্যুতে সম্পৃক্ততা


🔹 ইরানের সংস্কৃতি ও সাহিত্য

ইরান পৃথিবীর অন্যতম ধ্রুপদী সাহিত্য ও সংস্কৃতির কেন্দ্র। পারস্য ভাষায় লেখা কবিতা, স্থাপত্যশিল্প, চিত্রশিল্প, হস্তশিল্প ও রন্ধনশৈলী—সবকিছুতেই রয়েছে অনন্য বৈচিত্র্য।

📚 বিশ্ববিখ্যাত পারস্য কবি:

  • হাফিজ

  • রুমি

  • ওমর খৈয়াম

  • ফেরদৌসি


🔹 ইরানের ধর্ম ও ধর্মীয় জীবন

ইরানের ৯৫% মানুষ শিয়া মুসলিম। বাকিরা সুন্নি মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বী। ইসলামিক মূল্যবোধ ইরানের আইন ও সামাজিক জীবনের ভিত্তি।


🔹 আধুনিক ইরান: বিজ্ঞান, শিক্ষা ও প্রযুক্তি

ইরান আজ শিক্ষায়, মেডিকেলে, এবং পারমাণবিক গবেষণায় অনেক এগিয়েছে। দেশটি তথ্যপ্রযুক্তি, রোবটিক্স, ও মহাকাশ গবেষণায়ও গুরুত্ব দিচ্ছে।

🔹 ইরান বনাম যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ১৯৭৯ সালের পর থেকে শত্রুতামূলক। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ইরানের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আবারো পরমাণু চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে।


🔹 ইরান ও বাংলাদেশ: সম্পর্ক

বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান এবং ধর্মীয় বন্ধন রয়েছে। উভয় দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং ওআইসির সদস্য।


🔹 ইরান ভ্রমণ

ইরানে রয়েছে বহু প্রাচীন নিদর্শন:

  • পার্সেপোলিস

  • ইমাম স্কয়ার

  • শিরাজ ও এসফাহান শহর

  • প্রাচীন মসজিদ ও দুর্গ

এছাড়া, ইরানি খাবার, অতিথিপরায়ণতা ও আতিথেয়তা বিশ্বজুড়ে সমাদৃত।

🔹 ইরান সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণা

অনেকেই ইরানকে কেবল যুদ্ধ বা নিষেধাজ্ঞার দেশ হিসেবে দেখে, কিন্তু বাস্তবে দেশটি শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় সহনশীলতা ও আত্মমর্যাদায় উজ্জ্বল এক জাতি।


🔹 উপসংহার

ইরান একটি প্রাচীন সভ্যতা, একটি ইসলামিক আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র এবং বিশ্বরাজনীতির একটি কেন্দ্রীয় শক্তি। এর ইতিহাস, সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং আধুনিক রাজনীতির আলোকে ইরান একটি বহুমাত্রিক দেশ—যাকে বোঝা, জানা ও সম্মান করা দরকার।

ইরান দেশ নিয়ে আপনার যত সব প্রশ্নের উত্তর

ইরান একটি ইসলামী রাষ্ট্র।

ইরানের প্রধান আয়ের উৎস তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, কৃষি ও খনিজ সম্পদ।

ইরানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯৯% মুসলিম, যেখানে শিয়া মুসলিমদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

ইরানে হিন্দু জনসংখ্যা খুবই কম, প্রায় ১ লাখের কাছাকাছি।

ইরান ইসলাম গ্রহণ করেছিল ৭ম শতাব্দীতে আরব মুসলিম বাহিনীর আক্রমণের মাধ্যমে, যাদের দ্বারা ইসলামি ধর্ম প্রচারিত হয়েছিল।

হ্যাঁ, ইরান একটি ইসলামী রাষ্ট্র। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর এটি পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার অধীনে চলে আসে।

ইরানের প্রধান ভাষা হলো ফারসি (পারসি)।

ইরানের প্রধান ধর্ম ইসলাম, বিশেষ করে শিয়া মুসলিম ধর্ম।

হ্যাঁ, ইরানিরা মুসলমান, এবং বেশিরভাগ ইরানি শিয়া মুসলিম।

পারস্য নামটি ১৯৩৫ সালে ইরান সরকার কর্তৃক পরিবর্তিত হয়। ইরানকে “পারস্য” বলা হত, তবে আধুনিককালে এটি ইরানের আধিকারিক নাম।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মূল কারণ ছিল শাসক শাহ রেজা পাহলভীর অগণতান্ত্রিক শাসন, পশ্চিমি প্রভাব এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা।

ইরান একটি মধ্যম আয়ের দেশ, তবে তেল এবং গ্যাসের রপ্তানি থেকে যথেষ্ট আয় হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে এর উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে।

ইরান একটি শক্তিশালী দেশ, বিশেষত সামরিক শক্তি এবং আঞ্চলিক প্রভাবের ক্ষেত্রে।

হ্যাঁ, ইরানে জরথুস্ট ধর্ম এখনও কিছু সংখ্যক লোক দ্বারা পালিত হয়, এবং এটি ইরানের একটি সংখ্যালঘু ধর্ম।

না, ইরানিরা আরব নয়, তারা ইরানীয় এবং তাদের প্রধান ভাষা ফারসি।

হ্যাঁ, পারসি ভাষা ইরানের প্রধান ভাষা এবং এটি ইরানের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অংশ।

না, ইরানের শাহ জরথুস্ট্র ছিলেন না। তিনি ইসলাম ধর্মের অনুসারী ছিলেন।

ইরানিরা প্রধানত ইরানীয় জাতি, এবং তাদের ভাষা হলো ফারসি (পারসি)।

ইরান পৃথিবীর প্রাচীনতম দেশগুলির মধ্যে একটি, যার ইতিহাস ৩,০০০ বছরেরও বেশি পুরোনো।

পারসিদের ঐতিহ্যগত ধর্ম ছিল জরথুস্ট্রীয় ধর্ম, তবে বর্তমানে অধিকাংশ পারসি মুসলমান।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *