ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম ইতিহাস

ইসরাইল

এই পোষ্টে যা যা পাবেন

ইজরাইল বা ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম ইতিহাস

ইসরাইলের জন্ম ইতিহাস একটি জটিল এবং উত্তেজনাপূর্ণ অধ্যায়। ইহুদি জনগণের দীর্ঘ সংগ্রাম এবং ইহুদি জাতীয়তাবাদ বা জিওনিজম আন্দোলনের ফলস্বরূপ, ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। এই প্রতিষ্ঠা ছিল একটি দীর্ঘ ইতিহাসের পরিণতি, যার পেছনে ধর্মীয়, রাজনৈতিক, এবং ভূগোলিক কারণ রয়েছে।

ইসরাইলের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট:

১. ইহুদি জাতীয়তাবাদ (জিওনিজম):

  • ১৯ শতকের শেষদিকে থিওডোর হের্জল নামক এক ইহুদি নেতা জিওনিস্ট আন্দোলন শুরু করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল ইহুদি জনগণের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

  • এই আন্দোলনটির মূল লক্ষ্য ছিল ইহুদিদের জন্য ইসরাইলের ভূমিতে একটি স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

  1. ব্রিটিশ ম্যান্ডেট (১৯১৭-১৯৪৮):

    • ব্রিটিশ সরকার ১৯১৭ সালে বালফোর ডিক্লেয়ারেশন নামে একটি ঘোষণা দেয়, যেখানে তারা প্যালেস্টাইন অঞ্চলে একটি ইহুদি জাতীয় গৃহ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয়।

    • ১৯২০-১৯৪৮ পর্যন্ত প্যালেস্টাইন ছিল ব্রিটিশ ম্যান্ডেট অধীনে, যেখানে ব্রিটিশ সরকার ইহুদি এবং আরব জনগণের মধ্যে সংঘর্ষ বন্ধ করার চেষ্টা করছিল, তবে এটি সফল হয়নি।

  2. জাতিসংঘের ভূমিকা (১৯৪৭):

    • ১৯৪৭ সালে, জাতিসংঘ প্যালেস্টাইন বিভাজন পরিকল্পনা গ্রহণ করে, যার মাধ্যমে প্যালেস্টাইনকে দুটি রাষ্ট্রে ভাগ করার প্রস্তাব দেয়া হয়—একটি ইহুদি রাষ্ট্র এবং একটি আরব রাষ্ট্র। এই পরিকল্পনাটি ইহুদিদের পক্ষ থেকে সমর্থিত হলেও আরবরা এর বিরোধিতা করেন।

    • জাতিসংঘের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরই শুরু হয় ইসরাইল-আরব যুদ্ধ

  3. ইসরাইলের স্বাধীনতা ঘোষণা (১৯৪৮):

    • ১৯৪৮ সালের ১৪ মে, ডেভিড বেন-গুরিয়ন ইসরাইলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার পরপরই আরব দেশগুলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

    • যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, ইসরাইল তার অঘোষিত অঞ্চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।


ইসরাইল যাদের সাথে সীমানা ভাগ করে:

ইসরাইলের সীমানা মোট ৫টি দেশের সাথে রয়েছে এবং এর সাথে দুইটি মূল ভূখণ্ডের সাথে সীমান্ত সংযোগ রয়েছে।

১. লেবানন (উত্তর):

  • ইসরাইলের উত্তরে লেবানন দেশের সাথে প্রায় 79 কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে।

  • দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষের ইতিহাস রয়েছে, বিশেষত হিজবুল্লাহ এবং ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে লড়াইয়ের কারণে।

  1. সিরিয়া (উত্তর-পূর্ব):

    • সিরিয়া-এর সাথে ইসরাইলের সীমান্ত প্রায় 83 কিলোমিটার দীর্ঘ, যেখানে গোলান হাইটস অঞ্চল রয়েছে।

    • গোলান হাইটস ১৯৬৭ সালের ছয়দিনের যুদ্ধে ইসরাইল দখল করে নেয়, এবং এটি এখন ইসরাইলের অধীনে রয়েছে, যদিও সিরিয়া এখনও এই অঞ্চলের অধিকার দাবি করে।

  2. জর্ডান (পূর্ব):

    • ইসরাইলজর্ডান দেশের মধ্যে সীমানা প্রায় 307 কিলোমিটার দীর্ঘ।

    • ১৯৯৪ সালে, ইসরাইলজর্ডান এক চুক্তি স্বাক্ষর করে যার মাধ্যমে এই দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাদের মধ্যে একটি সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

  3. মিশর (দক্ষিণ-পশ্চিম):

    • মিশর এবং ইসরাইলের মধ্যে সীমানা প্রায় 266 কিলোমিটার

    • ১৯৭৯ সালে মিশর এবং ইসরাইল শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং এর ফলে মিশর প্রথম আরব দেশ হিসেবে ইসরাইলের সাথে শান্তি চুক্তি করে।

  4. ফিলিস্তিন (পূর্ব এবং পশ্চিম):

    • ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে সীমানা এক অস্থির ও বিতর্কিত অঞ্চল। পশ্চিম তীর (West Bank) এবং গাজা অঞ্চলে ফিলিস্তিনিরা বসবাস করে, যা বর্তমানে ইসরাইলের অধীনে রয়েছে।

    • ফিলিস্তিনের মানুষ তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘকাল ধরে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, এবং ইসরাইলের সীমান্তে এই সংঘর্ষ এখনও চলমান।


ইসরাইলের আকার এবং আয়তন

ইসরাইলের আকার অত্যন্ত ছোট, তবে এর রাজনৈতিকসামরিক প্রভাব অনেক বিস্তৃত।

  1. আয়তন:

    • ইসরাইলের মোট আয়তন প্রায় ২২,১৪৭ বর্গ কিলোমিটার (প্রায় ৮,৫৬০ বর্গ মাইল)।

    • এর আয়তন ছোট হলেও, এই ছোট আয়তনের মধ্যে ইসরাইল নানা ভূখণ্ড এবং সীমান্তে উচ্চ সামরিক ক্ষমতা অর্জন করেছে।

  2. ভূখণ্ডের বৈচিত্র্য:

    • ইসরাইলের ভূখণ্ডে রয়েছে পাহাড়, মরুভূমি, নদী, এবং উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকা

    • মৃত সাগর, গোলান হাইটস, এবং নেগেভ মরুভূমি ইসরাইলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ড।

ইসরাইল এর রাজধানী

ইসরাইলের রাজধানী হলো জেরুজালেম (Jerusalem)। এটি ইসরাইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, এবং রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেরুজালেম ইহুদী, খ্রিস্টান এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত, যার মধ্যে ওয়েস্টার্ন ওয়াল (ইহুদীদের জন্য পবিত্র), আল-আকসা মসজিদ (মুসলিমদের জন্য), এবং সেন্ট্রাল চ্যাপেল (খ্রিস্টানদের জন্য) রয়েছে।

এছাড়া, ইসরাইলের অধিকার এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিতর্কের কারণে, বেশ কিছু দেশ এখনও জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি এবং কিছু দেশ তেল আবিবকে তাদের দূতাবাসের স্থান হিসেবে রেখেছে। তবে ইসরাইল সরকার জেরুজালেমকেই তার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেছে।

ইসরাইল এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

বিষয় বিবরণ
দেশের নাম ইসরাইল (Israel)
অধিকারভুক্ত নাম রাষ্ট্র ইসরাইল (State of Israel)
রাজধানী জেরুজালেম (Jerusalem)
ভূগোলিক অবস্থান মধ্যপ্রাচ্য, মধ্যসাগর উপকূলে, প্যালেস্টাইন অঞ্চলের পাশে
আয়তন ২২,১৪৭ বর্গ কিলোমিটার (৮,৫৬০ বর্গ মাইল)
জনসংখ্যা প্রায় ৯.৫ মিলিয়ন (৯৫০ লক্ষ)
ভাষা হেব্রু, আরবি
ধর্ম ইহুদি (প্রধান), খ্রিস্টান, ইসলাম
রাজনৈতিক ব্যবস্থা পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (Benjamin Netanyahu)
রাষ্ট্রপতি আইজ্যাক হারৎজোগ (Isaac Herzog)
স্বাধীনতার ঘোষণা ১৯৪৮ সালের ১৪ মে
অর্থনীতি উন্নত অর্থনীতি, হাই-টেক শিল্প, কৃষি, প্রতিরক্ষা খাত
সীমান্ত দেশসমূহ লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, মিশর, ফিলিস্তিন
প্রধান বন্দর হাইফা, আশদোদ
প্রধান নদী জর্ডান নদী
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য মরুভূমি (নেগেভ), পাহাড়, মৃত সাগর, গোলান হাইটস
জাতীয় দিবস ইসরাইলের স্বাধীনতা দিবস (১৪ই মে ১৯৪৮)
সম্মানীয় স্থান ওয়েস্টার্ন ওয়াল (বন্দর)

বিশ্বের সেসব দেশ এখনো ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়নি , তাদের তালিকা

ক্র. নং দেশের নাম
1 আলজেরিয়া
2 বাহরাইন
3 বাংলাদেশ
4 চাদ
5 কুয়েত
6 লিবিয়া
7 মালাউই
8 মালদ্বীপ
9 মরিতানিয়া
10 নাইজেরিয়া
11 পাকিস্তান
12 সৌদি আরব
13 সোমালিয়া
14 সুদান
15 তিউনিসিয়া

মুসলিম দেশগুলো যারা ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছে:

1. ইউএই (সংযুক্ত আরব আমিরাত)

  • তারিখ: ১৩ আগস্ট ২০২০

  • চুক্তির নাম: অ্যাব্রাহাম চুক্তি

  • স্বাক্ষরকারী:

    • মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান (সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ)

    • ডোনাল্ড ট্রাম্প (তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট)

    • বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী)

  • কারণ:

    • রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা, মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা, এবং ইসরাইলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি।

2. বাহরাইন

  • তারিখ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

  • চুক্তির নাম: অ্যাব্রাহাম চুক্তি

  • স্বাক্ষরকারী:

    • হামাদ বিন ঈসা আল খলিফা (বাহরাইনের রাজা)

    • ডোনাল্ড ট্রাম্প (তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট)

    • বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী)

  • কারণ:

    • বাণিজ্যিক সুবিধা, সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং ইরানকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহযোগিতা।

3. সুদান

  • তারিখ: ২৩ অক্টোবর ২০২০

  • চুক্তির নাম: অ্যাব্রাহাম চুক্তি

  • স্বাক্ষরকারী:

    • আব্দুল ফাত্তাহ আল বুরহান (সুদানের প্রেসিডেন্ট)

    • ডোনাল্ড ট্রাম্প (তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট)

  • কারণ:

    • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সমর্থন এবং ভিন্ন রাজনৈতিক অঙ্গীকার। সুদান সরকার পরিবর্তন করেছে এবং এই চুক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভ করতে চেয়েছে।

4. মরক্কো

  • তারিখ: ১০ ডিসেম্বর ২০২০

  • চুক্তির নাম: অ্যাব্রাহাম চুক্তি

  • স্বাক্ষরকারী:

    • মোহাম্মদ ষষ্ঠ (মরক্কোর রাজা)

    • ডোনাল্ড ট্রাম্প (তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট)

    • বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী)

  • কারণ:

    • মরক্কো ইসরাইলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার এবং তাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও শান্তি স্থাপনে সহায়তার জন্য এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

5. কুয়েত (প্রত্যক্ষ স্বীকৃতি নয়, তবে আংশিক সমর্থন)

  • তারিখ: 2020-2021 (অপ্রত্যক্ষ চুক্তি)

  • কারণ:

    • কুয়েত সরাসরি ইসরাইলকে স্বীকৃতি না দিলেও অ্যাব্রাহাম চুক্তি এর মাধ্যমে কিছু আঞ্চলিক শান্তি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমর্থন জানিয়েছে।


সামগ্রিক কারণ:

  1. অর্থনৈতিক সুবিধা: মুসলিম দেশগুলো ইসরাইলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়, বিশেষ করে প্রযুক্তি, কৃষি, ও নিরাপত্তা খাতে।

  2. রাজনৈতিক কারণে: ইরান এবং অন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে সংঘাতের পর, ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক গড়তে তারা আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভের চেষ্টা করছে।

  3. সামরিক সহযোগিতা: ইসরাইলের সাথে সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা বজায় রাখা।

  4. প্রাকৃতিক সম্পদ ও প্রযুক্তির লাভ: ইসরাইলের উন্নত প্রযুক্তি এবং অন্যান্য শিল্পে সহযোগিতা।

এই দেশগুলো ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের রাজনীতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক লাভের জন্য চুক্তি করেছে।

ইসরাইলের অর্থনীতির চালিকা শক্তি

ইসরাইলের অর্থনীতি আধুনিক এবং প্রযুক্তিনির্ভর। এর চালিকা শক্তি হিসেবে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:

  1. হাই-টেক শিল্প:

    • ইসরাইল বিশ্বের বৃহত্তম স্টার্টআপ হাব হিসেবে পরিচিত। দেশটি তথ্য প্রযুক্তি, সাইবার সিকিউরিটি, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (AI) বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়।

    • টেলিকমিউনিকেশন, বায়োটেকনোলজি এবং ন্যানো টেকনোলজি খাতেও ইসরাইল বিশাল উন্নতি সাধন করেছে।

  2. প্রতিরক্ষা শিল্প:

    • ইসরাইলের প্রতিরক্ষা শিল্পের মধ্যে অস্ত্র তৈরি, সামরিক সরঞ্জাম, সাইবার নিরাপত্তা এবং রকেট প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত। এই খাত থেকে দেশটির আয় বিপুল।

  3. কৃষি:

    • ইসরাইল তার উন্নত কৃষি প্রযুক্তি এবং জীববিজ্ঞান খাতের জন্য পরিচিত। মরুভূমি অঞ্চলেও কৃষি উৎপাদন সম্ভব করেছে।

    • পানি ব্যবস্থাপনা এবং জল সংরক্ষণ প্রযুক্তি ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ কৃষি চালিকা শক্তি।

  4. পর্যটন:

    • ইসরাইলের ধর্মীয় স্থান যেমন জেরুজালেম, ভূতত্ত্ব এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেশের পর্যটন শিল্পকে গুরুত্বপূর্ণ করেছে।

  5. অর্থনৈতিক সহযোগিতা:

    • ইসরাইল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, যা দেশটির অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে।

 অর্থনীতির আকার

  • GDP (2021): ইসরাইলের মোট জিডিপি (মোট দেশীয় উৎপাদন) প্রায় $516.1 বিলিয়ন (2021 সালের হিসাব অনুযায়ী)।

  • GDP per capita (2021): প্রায় $57,000 (প্রতি মাথাপিছু আয়)।

  • অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: ইসরাইলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রতি বছর গড়ে ৩-৪% এর মধ্যে থাকে।

ইসরাইলের মুদ্রার নাম

  • মুদ্রার নাম: নিউ শেকেল (New Shekel), আন্তর্জাতিকভাবে ILS (Israeli New Shekel) নামেও পরিচিত।

  • 1 শেকেল 100 אגורות (অগোরোত) এ বিভক্ত।

বাংলাদেশি টাকার সাথে বিনিময় হার

বর্তমানে (২০২৫ সালের জুন অনুযায়ী), ইসরাইলি শেকেল (ILS) এবং বাংলাদেশি টাকার (BDT) মধ্যে আনুমানিক বিনিময় হার:

  • 1 ইসরাইলি শেকেল (ILS) ≈ ২৩-২৫ বাংলাদেশি টাকা (BDT)

বিনিময় হার বিভিন্ন সময়ে বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে। এ জন্য সব সময় অফিসিয়াল বা ব্যাংকিং সূত্র থেকে সর্বশেষ হার চেক করা উচিত।

প্রযুক্তি জগতে ইসরাইল এর দাপট

ইসরাইল প্রযুক্তির দুনিয়ায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এটি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক টেক জায়ান্ট নিয়ন্ত্রণ বা তাদের সাপোর্ট করে। দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টার্টআপ হাব হিসেবে পরিচিত, এবং এর প্রযুক্তিগত শক্তি অনেক বড় প্রযুক্তি কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কিত। নিচে কিছু ইসরাইলি টেক জায়ান্ট এবং ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ বা সহযোগিতা করা প্রযুক্তি কোম্পানির তালিকা দেওয়া হলো:

১. Intel

  • ইসরাইলের ভূমিকা: ইন্টেল বিশ্বের শীর্ষ চিপ নির্মাতা কোম্পানি এবং তাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র ইসরাইলে অবস্থিত।

  • ইসরাইলের কিরিয়াত গাত শহরে ইন্টেল এর বৃহত্তম উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে চিপ এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ইনোভেশন নিয়ে কাজ করা হয়।

  • Intel’s Mobileye: ইসরাইলি কোম্পানি Mobileye (যা স্বয়ংক্রিয় গাড়ির জন্য প্রযুক্তি তৈরি করে) ইন্টেল দ্বারা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এটি অটোমোবাইল প্রযুক্তি এবং স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং সিস্টেমের অন্যতম নেতা।

২. Check Point

  • ইসরাইলের ভূমিকা: Check Point বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি। এটি ফায়ারওয়াল, ইনফেকশন প্রিভেনশন, এবং অন্যান্য সাইবার সিকিউরিটি সলিউশনের জন্য জনপ্রিয়।

  • কোম্পানিটি ইসরাইলে প্রতিষ্ঠিত এবং এটি এখন আন্তর্জাতিকভাবে সাইবার নিরাপত্তা ইন্ডাস্ট্রির এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা।

৩. Mobileye (ইন্টেল অধিগ্রহণ)

  • ইসরাইলের ভূমিকা: Mobileye একটি ইসরাইলি প্রযুক্তি কোম্পানি যা স্বয়ংক্রিয় গাড়ি প্রযুক্তি এবং ড্রাইভার-অ্যাসিস্ট্যান্স সিস্টেম তৈরি করে। এটি ২০১৭ সালে Intel কর্তৃক $১৫.৩ বিলিয়নে অধিগ্রহণ করা হয়।

  • Mobileye স্বয়ংক্রিয় গাড়ির জন্য কম্পিউটার ভিশন এবং এআই প্রযুক্তি তৈরি করে।

৪. Wix

  • ইসরাইলের ভূমিকা: Wix একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট বিল্ডিং প্ল্যাটফর্ম, যা ইসরাইলের একটি স্টার্টআপ হিসেবে শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এটি বিশ্বব্যাপী ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাইন ক্ষেত্রে একটি বড় নাম।

  • Wix ব্যবহারের মাধ্যমে হাজার হাজার ছোট ও মাঝারি ব্যবসা এবং উদ্যোক্তা তাদের ওয়েবসাইট তৈরি করছে।

৫. Nice Systems

  • ইসরাইলের ভূমিকা: Nice Systems একটি ইসরাইলি সফটওয়্যার কোম্পানি যা কাস্টমার ইন্টারঅ্যাকশন এবং কন্টাক্ট সেন্টার সলিউশন তৈরি করে।

  • এটি এআই এবং অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করে ব্যবসাগুলোর জন্য ডেটা সংগ্রহ, অ্যানালিটিক্স, এবং ফাঁক বন্ধ করার জন্য সিস্টেম ডিজাইন করে।

৬. Teva Pharmaceuticals

  • ইসরাইলের ভূমিকা: Teva Pharmaceuticals বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারক। এটি ইসরাইলের বৃহত্তম কোম্পানি হিসেবে পরিচিত এবং সারা বিশ্বে তার ঔষধ সরবরাহ করে।

  • Teva ইসরাইলের মেডিকেল প্রযুক্তি সেক্টরের অন্যতম শক্তিশালী নাম।

৭. Amdocs

  • ইসরাইলের ভূমিকা: Amdocs একটি ইসরাইলি সফটওয়্যার কোম্পানি যা কাস্টমার ক্যেয়ার এবং বিলিং সিস্টেম প্রদান করে টেলিকমিউনিকেশন এবং মিডিয়া কোম্পানির জন্য।

  • Amdocs বিশ্বের শীর্ষ টেলিকমিউনিকেশন সফটওয়্যার কোম্পানি এবং বিশ্বের অন্যতম বড় টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিস প্রোভাইডারগুলোর সাপোর্ট করে।

৮. CyberArk

  • ইসরাইলের ভূমিকা: CyberArk একটি ইসরাইলি সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানি যা প্রিমিয়াম সিকিউরিটি সলিউশন, বিশেষত প্রিভিলেজড অ্যাকাউন্ট সিকিউরিটি, এবং অ্যাকসেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করে।

  • কোম্পানিটি সাইবার নিরাপত্তা খাতে শীর্ষস্থানীয় একটি নাম এবং এটি একাধিক বড় প্রতিষ্ঠান ও সরকারী সংস্থার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করে।

৯. Stratasys

  • ইসরাইলের ভূমিকা: Stratasys একটি ৩ডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি কোম্পানি এবং এটি ইসরাইলের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে একটি বড় নাম। এই কোম্পানিটি ৩ডি প্রিন্টিং টেকনোলজি নিয়ে কাজ করে এবং বিভিন্ন শিল্পে উন্নত মডেল তৈরির প্রযুক্তি প্রদান করে।

১০. পাইওনিয়ার (Payoneer)

  • পাইওনিয়ার একটি ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম যা ইসরাইলি প্রযুক্তি কোম্পানি হিসেবে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি একটি ডিজিটাল পেমেন্ট সলিউশন এবং বিশ্বব্যাপী পেমেন্ট এবং ফান্ড ট্রান্সফার এর জন্য ব্যবহৃত হয়। যদিও পাইওনিয়ার ইসরাইল থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এটি নিজে কোনো ইসরাইলি পেমেন্ট সিস্টেম বা SWIFT সিস্টেম ব্যবহার করে না। তবে এটি বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং সিস্টেম এর সাথে সংযুক্ত থাকে, এবং ব্যাংক ট্রান্সফার, ডেবিট কার্ড এবং অন্যান্য পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর করতে পারে, যা কখনো SWIFT বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সিস্টেমের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।

ইসরাইল এর সামরিক শক্তি

ইসরাইলের সামরিক শক্তি বিশ্বে অন্যতম শক্তিশালী এবং অত্যাধুনিক। ইসরাইল তার সামরিক সক্ষমতা এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত, এবং এটি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সামরিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ইসরাইলের সামরিক শক্তির কিছু মূল দিক নিচে আলোচনা করা হলো:

১ ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF)

  • ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স (IDF) বা ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনী বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সেনাবাহিনী। IDF তিনটি প্রধান শাখায় বিভক্ত:

    1. ইসরাইলী সেনা (ইসরাইলী স্থল বাহিনী)

    2. ইসরাইলী বিমান বাহিনী (IAF)

    3. ইসরাইলী নৌ বাহিনী (IN)

  • IDF একটি জাতীয় সামরিক বাহিনী, যা দেশটির প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়। ইসরাইলের নাগরিকদের জন্য বৈধ সামরিক সেবা বাধ্যতামূলক, এবং পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ৩ বছর এবং মহিলাদের জন্য ২ বছর সেনাবাহিনীতে সেবা করা বাধ্যতামূলক।

২ বিমান বাহিনী (IAF)

  • ইসরাইলী বিমান বাহিনী (IAF) বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী বিমান বাহিনী হিসেবে পরিচিত। এটি অত্যাধুনিক ফাইটার জেট এবং ড্রোন সহ একাধিক বিমান প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ।

  • এর সবচেয়ে প্রখ্যাত বিমানগুলি হল:

    • F-35 Lightning II (স্টেলথ ফাইটার)

    • F-16 Fighting Falcon

    • F-15 Eagle

    • বোম্বার ও ড্রোন প্রযুক্তি

  • IAF এর একটি অত্যাধুনিক রাডার সিস্টেম এবং পৃথিবী-প্রতিরোধী প্রযুক্তি রয়েছে যা ইসরাইলের আকাশ সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।

৩ নিউক্লিয়ার অস্ত্র

  • ইসরাইল নিউক্লিয়ার অস্ত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে সেরা এবং এটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিউক্লিয়ার শক্তি হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়নি, কিন্তু বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে ইসরাইলের কাছে নিউক্লিয়ার অস্ত্র রয়েছে।

  • Dimona Nuclear Reactor (ডিমোনা পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর) ইসরাইলের নিউক্লিয়ার অস্ত্র উৎপাদনের প্রধান স্থান বলে মনে করা হয়।

  • এটি এক ধরনের অপ্রকাশিত নীতি অনুসরণ করে, অর্থাৎ, ইসরাইল কখনো ইসরাইলি নিউক্লিয়ার অস্ত্র সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি, কিন্তু তারা কখনো প্রকাশ্যে ইহুদি রাষ্ট্র নিরাপদ রাখতে এই অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

৪ আইরন ডোম (Iron Dome)

  • আইরন ডোম একটি অত্যাধুনিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম, যা শর্ট-রেঞ্জ রকেট এবং আকাশ থেকে নিক্ষিপ্ত মিসাইল গুলি রোধ করতে সক্ষম। এটি ফিলিস্তিন থেকে ইসরাইলের শহরগুলোর দিকে নিক্ষিপ্ত রকেটগুলির বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়।

  • আইরন ডোম ইসরাইলের বিমান বাহিনী দ্বারা পরিচালিত এবং এটি বিশ্বের অন্যতম সফল রকেট ডিফেন্স সিস্টেম হিসেবে পরিচিত।

৫ পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি

  • ইসরাইলের শর্ট রেঞ্জমিডিয়াম রেঞ্জ ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি, যেমন Jericho missiles, অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে একটি।

  • Jericho-III মিসাইলটি ৪,৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এবং এটি পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম।

৬ বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান

  • ইসরাইলের ইউনিভার্সিটি অব ইসরাইল এবং রিয়েল টাইম রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা গবেষণার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বেশিরভাগ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির মাধ্যমে উন্নত হয়।

  • ইসরাইলের মিলিটারি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (R&D) সেক্টর বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৭ বিশ্বস্ত সহযোগিতা ও সামরিক শক্তি

  • ইসরাইলের প্রধান সামরিক সহযোগী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা, অস্ত্র, প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। ইসরাইলের বিমান বাহিনী মার্কিন ফাইটার জেটের সাহায্যও পায়।

  • ফরাসী এবং ইউরোপীয় দেশগুলোও ইসরাইলের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি এবং ডিফেন্স সিস্টেম এর উন্নয়নে সহযোগিতা করে।

৮ আইডিএফ (IDF) এর শক্তি

  • ইসরাইলি সেনা (IDF) একটি অত্যাধুনিক বিপ্লবী সেনাবাহিনী যা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী স্পেশাল ফোর্সগুলোর মধ্যে একটি। এতে প্রশিক্ষিত কমান্ডো ফোর্স, স্নাইপার, বিশেষ বাহিনী রয়েছে যা সারা বিশ্বে বিভিন্ন নিরাপত্তা অভিযানে অংশ নেয়।

ইসরাইল এর বন্ধু দেশের তালিকা

ক্র. নং দেশের নাম
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA)
ভূটান
হাঙ্গেরি
ইতালি
জাপান
কানাডা
অস্ট্রেলিয়া
জার্মানি
ইউনাইটেড কিংডম (UK)
১০ নেদারল্যান্ডস
১১ দক্ষিণ কোরিয়া
১২ ভারত
১৩ বাহরাইন
১৪ সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE)
১৫ মরক্কো

ইসরাইলের শত্রু দেশগুলোর তালিকা

ক্র. নং দেশের নাম
ইরান
সিরিয়া
লেবানন
আলজেরিয়া
পাকিস্তান
ইরাক
ফিলিস্তিন
সৌদি আরব
লিবিয়া
১০ মিশর (তবে ১৯৭৯ সালে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে পরিস্থিতি বদলেছে)
১১ যেমেন
১২ তিউনিসিয়া

ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণ

ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণ অত্যন্ত জটিল এবং দীর্ঘকাল ধরে চলা এক সংঘাত। এর পেছনে ধর্মীয়, রাজনৈতিক, আঞ্চলিক এবং ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। এই সংঘাতটি মূলত ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবির সাথে সম্পর্কিত।

ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের মূল কারণ:

১ ভৌগোলিক ও জমির অধিকার

    • প্যালেস্টাইন (বর্তমানে পশ্চিম তীর এবং গাজা অঞ্চল) দীর্ঘকাল ধরে আরব জনগণের বাসভূমি ছিল। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর, প্যালেস্টাইন থেকে বহু ফিলিস্তিনি তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান, এবং তাদের ভূমি ইসরাইলের দ্বারা দখল করা হয়।

    • ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য, এটি ছিল বাড়ি হারানো এবং নিজস্ব ভূখণ্ডে অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া

  1. ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া

    • ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ প্যালেস্টাইনকে দুটি রাষ্ট্রে ভাগ করার প্রস্তাব দেয়—একটি ইহুদি রাষ্ট্র এবং একটি আরব রাষ্ট্র। তবে, আরব দেশগুলো এই পরিকল্পনাটি প্রত্যাখ্যান করে এবং ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজস্ব রাষ্ট্র দাবি করে।

    • ১৯৪৮ সালে ইসরাইলের স্বাধীনতা ঘোষণার পর আরব দেশগুলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। এই যুদ্ধের ফলে ইসরাইল তার সীমানা বাড়াতে সক্ষম হয় এবং হাজার হাজার ফিলিস্তিনি উদ্বাস্ত্র হয়ে পড়েন।

  2. ধর্মীয় স্থান

    • ইসরাইল এবং ফিলিস্তিন উভয়ই জেরুজালেম শহরকে তাদের পবিত্র শহর হিসেবে বিবেচনা করে। ইহুদিরা, খ্রিস্টানরা, এবং মুসলিমরা এই শহরের বিভিন্ন স্থানকে ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করেন, যার মধ্যে ওয়েস্টার্ন ওয়াল (ইহুদি ধর্মের পবিত্র স্থান) এবং আল-আকসা মসজিদ (ইসলাম ধর্মের পবিত্র স্থান) রয়েছে।

    • জেরুজালেমের ধর্মীয় স্থানগুলোর অধিকার নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র বিতর্ক রয়েছে।

  3. ফিলিস্তিনির জাতীয়তাবাদ

    • ফিলিস্তিনিদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। তারা তাদের নিজস্ব স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যা ইসরাইলের সীমানার মধ্যে অবস্থিত। তবে ইসরাইলের নিরাপত্তা এবং অস্তিত্বর বিষয়টি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

    • ফিলিস্তিনিরা তাদের পশ্চিম তীরগাজা অঞ্চলের অধিকার দাবি করে, তবে ইসরাইল এসব এলাকাকে নিরাপত্তা সংকট হিসেবে বিবেচনা করে।

  4. ইসরাইলের নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক প্রভাব

    • ইসরাইল তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সীমান্ত এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে গোলান হাইটস (সিরিয়ার কাছাকাছি একটি অঞ্চল), পশ্চিম তীর, এবং গাজা। ইসরাইলের জন্য এই অঞ্চলগুলোর দখল নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

    • ফিলিস্তিনের বিভিন্ন গোষ্ঠী (যেমন হামাস) ইসরাইলের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে থাকে, এবং ইসরাইল তাদের জবাব হিসেবে গাজা অঞ্চলে সেনা অভিযান পরিচালনা করে, যা সংঘাতকে আরও তীব্র করে তোলে।

  5. আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও চাপ

    • বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে থাকে, যা যুদ্ধের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের প্রধান মিত্র, এবং অনেক আরব দেশ ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করে।

    • বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন জাতিসংঘ, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চুক্তি এবং বিশ্বাসের পরিসীমা প্রস্তাব করেছে, তবে সেগুলোর বাস্তবায়ন সফল হয়নি।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *