সূর্য কন্যা পর্ব ১

জাবির আর ফারজানার বিয়ে
ওপেনিং দৃশ্যঃ একটি খোলা কুরআন শরীফ, চারপাশে মোমবাতির আলো বা নরম লাইট। পেছনে মিষ্টি কণ্ঠে তিলাওয়াত ভেসে আসছে।
আয়াত (তিলাওয়াত/সাবটাইটেল):
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
(সূরা আর-রূম ৩০:২১)
বাংলা অনুবাদ (ভয়েসওভার):
তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো—তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।
দৃশ্য ১: সিলেটর একটি উপজেলা শহর, সন্ধ্যা বেলা
দৃশ্য: জাবির রিক্সা করে মেসে ফিরছে, হাতে কোম্পানির ব্যাগ। কপালে ঘাম, চোখে ক্লান্তি, গায়ে কোম্পানির ইউনিফর্ম,পায়ে সু জুতা আর ক্লিন সেভ করা পরিপাটি, সূর্য ডুবে গেছে , রাস্তা কোলাহল্পূর্ণ আর নিয়ন আলোয় ভরা।
ন্যারেশন:
জাবির, বয়স প্রায় ত্রিশ। সিলেটে এক কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। সৎ, পরিশ্রমী, কিন্তু জীবনে এখনো একা।
দৃশ্যঃ রিক্সা থেকে নেমে সে ভাড়া দিবে। অটোরিক্সা নয় প্যাডেল রিক্সা। রিক্সার পেছনে হাসন রাজা ছবির পোস্টার।
সংলাপ- জাবিরঃ
এই নেন মামা আপনার ভাড়া।
সংলাপ- রিক্সার চালকঃ
মামা আমার কাছেতো ১০ টাকা খুচরা নেই।
সংলাপ- জাবিরঃ ১০ টাকা দিতে হবে না , তুমি চা খেয়ে নিও।
সংলাপ- রিক্সার চালকঃ মুখে হাসি নিয়ে – ধন্যবাদ মামা, আল্লাহ আপনার বালা করুক। ( এই বলে সে রিক্সা নিয়ে চলে যাবে আর জাবির ব্যাগ হাতে নিয়ে ক্লান্ত শরীরে মেসে প্রবেশ করবে।রুমে ডুকে জুতা খুলে বিছানায় শুয়ে পড়বে আর খালাকে ( কাজের বুয়া ) ডাকবে
দৃশ্য ২: ম্যাচের দৃশ্য
দৃশ্যঃ একটি পুরনো বাড়ী, চারপাশ বাউন্ডারী করা, মেইন গেইট আছে, বাউন্ডারীর ভেতরে চারপাশে সারি সারি নারিকেল গাছ, টিনশেঠের পুরনো আমলের ঘর। ঘর গুলো পুরনো হলেও বেশ প্রশস্থ , উঁচু, বড় বারান্দা আর তাই বেশ আরামদায়ক। সান বাধানো পুকুর ঘাট। জাবির ব্যাগ কাঁদে করে বারান্দার গেইট খুলে রুমে প্রবেশ করে। রুমে ৩টি খাট, তিন খাটে ৬জন থাকে। রুমের ভিতর লাইট্ম ফ্যান আর ২১ ইঞ্চি টিভি আছে। সবাই স্মার্ট বাটন মোবাইল ব্যবহার করে। সবাই কোন না কোন কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতনিধি হিসেবে কাজ করে। এরা এখানে ফ্যামিলির মতই থাকে/ সব কাজ মিলে মিশে কাজ করে।
সংলাপ- জাবিরঃ এই খালা আর কেউ এখনো মেসে ফিরেনি?
সংলাপ- খালাঃ না, মামা শুধু আপনি আইছেন, বাজার আনেননি? রান্না করমু কি?
সংলাপ- জাবিরঃ সারাদিন মার্কেটে কাজ করতে করতে ভুলে গেছি। আচ্ছা আমি সবুজ কে ফোনে বলে দিচ্ছি, এই ফাঁকে আপনি অন্য কাজ করুন।
সংলাপ- খালাঃ ঠিক আছে মামা। ( এই বলে খালা রান্না ঘরে গিয়ে চাল ধূতে লেগে গেল আর জাবির সবুজকে বাজার আনার জন্য ফোন দিচ্ছে )
সংলাপ- জাবিরঃ ফোনে – হ্যাঁ সবুজ তোমার মেসে আসতে কেমন লেইট হবে?
সংলাপ- সবুজঃ ফোনে- আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসব? কেন ভাই কোন সমস্যা?
সংলাপ- জাবিরঃ ফোনে- সমস্যা না, আমি বাজার আনতে ভুলে গেছি, যদি তোমার কাছে টাকা থাকে তাহলে আসার সময় কিছু শাক সব্জী আর মাছ নিয়ে আইস আর যদি তোমার কাছে টাকা না থাকে তাহলে আমাকে আবার বাজারে যেতে হবে আরকি।
সংলাপ- সবুজঃ ফোনে- না বড় ভাই, আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না, আমার কাছে টাকা আছে, আমি সবকিছু নিয়ে আসব।
সংলাপ- জাবিরঃ ফোনে- ওকে , তাহলে আস, অপেক্ষা করছি। ( এই বলে ফোনের কল কেটে দেয়।
দৃশ্যঃ একে একে সবাই বাসায় আসে , সবাই একসাথে বসছে রাতের খাবার খেতে। খাওয়ার সময় একজন আরেক জনের খোঁজ খবর নিচ্ছে। মেলামাইনের প্লেট, বাটি, স্টিলের গ্লাস, প্লাস্টিকের জগ সব কিছু আছে।
সংলাপ- সবুজঃ বড় ভাই ( জাবির কে ), কয়দিন আগেযে আপনার বিয়ের কথা হচ্ছিল, সেটার কি খবর? পাত্রী দেখছেন না দেখতে যাবেন?
সংলাপ- জাবিরঃ ভাইরে এলাকায়তো বিয়ে করতে পারতেছিনা, আমার ছোট ভাই অনেক আগেই বিয়ে করেছে , সবাই মনে করে আমার কোন সমস্যা আছে; তাই আমার বিয়ে করাটা হচ্ছেনা।
সংলাপ- সবুজঃ আপনিতো এখানেই বিয়ে করতে পারেন? আপনি যার সাথে সম্পর্কে আছেন সেওতো খুব সুন্দরী। ( এই কথায় সবাই মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল)।
সংলাপ- জাবিরঃ হ্যাঁ, বিয়ে করতে পারি কিন্তু আম্মার মত নেই। আম্মা ওকে দেখেছে কিন্তু আমাকে সাফ না করে দিয়েছে। ( এই কথায়ও সবাই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল) ।
সংলাপ- সবুজঃ তাহলে কি বিয়ে করবেননা?
সংলাপ- জাবিরঃ দেখি , আগামী সপ্তায় নাটোর যাব পাত্রী দেখতে। যদি পছন্দ হয়ে যায় তাহলে বিয়ে করেই আসব।
সংলাপ- সবাইঃ সেই আশায় রইলাম ভাই ( আলাপ করতে করতে রাতের খাবার শেষ হয়ে গেল ) ।
দৃশ্য ৩: নাটোরের গ্রাম
দৃশ্যঃ ধানক্ষেত, মাটির রাস্তা, মাঝে মাঝে বিশাল বড় বড় আম আর লিচু বাগান দূরে একটি পুরনো মাটির ঘর যাতে ২টি রুম আছে , ঘরের চার পাশে লিচু বাগান। বসার ঘরে কনে পরিবারের মা,বাবা, ভাই-ভাবীরা, চাচা – চাচীরা , আর মেয়ে বসে আছে। মেয়ের নাম ফারজানা। ওড়না টেনে মুখ নামানো, চুপচাপ। জাবির অনেক মিষ্টি আর ফল নিয়ে গেছে/ বাড়ীর উঠুনে কয়েকটি চেয়ার আর মাদুর বিছানো ছিল।
ন্যারেশ
ফারজানা, সুন্দরী, ভদ্র, পর্দাশীল মেয়ে। দারিদ্র্য তাকে নরম স্বরে কথা বলতে শিখিয়েছে, কিন্তু চোখে ছিল গভীর শান্তি।
সংলাপ- জাবিরের বেয়াইঃ উঠুনে প্রবেশ করে- আসসালামু আলাইকুম
সংলাপ- পাত্রীর চাচাঃ ওয়ালাইকুম সালাম হুজুর। আপনারা কেমন আছেন?
সংলাপ- জাবিরের বেয়াইঃ জ্বি, আমরা ভালো আছি। এই হচ্ছে আপনাদের পাত্র( জাবিরকে ইশারা করে )।
সংলাপ- জাবিরঃ আসসালামু আলাইকুম।
সংলাপ- পাত্রীর চাচাঃ ওয়ালাইকুম সালাম। আমি হচ্ছি পাত্রীর কাকা। আপনারা বসুন। আমরা চা নাস্তার ব্যবস্থা করছি। ( এই বলে চাচা ঘরের ভিতরে চলে গেল আর জাবিরের মিষ্টি আর ফল গুলো অন্য একটি ছেলের সাহায্যে ঘরে পাঠিয়ে দিল।
দৃশ্যঃ জাবির আর তার বেয়াই উঠুনে চেয়ারে বসে আছে, বিকেল হয়ে গেছে, হাল্কা বাতাস বইছে তাদের ঘিরে অনেক মানুষ দূর থেকে দেখছে, সারা পাড়া খবর হয়ে গেছে সিলেটি জামাই অনেক মিষ্টি আর ফলমুল নিয়ে আসছে পাত্রী দেখতে। সন্ধ্যার আগে আগে অনেক মানুষ জড়ো হয়েগেছে। পাত্রী দেখার পালা- পাত্রীকে মেকাপ না করিয়ে উঠুনে নিয়ে আসা হলো
সংলাপ- জাবিরের বেয়াইঃ মাশাল্লাহ – আলহামদুলিল্লাহ। আপনাদের মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে। কি বিয়াই আপনার কি মত? ( জাবির কে উদ্দেশ্য করে) ।
সংলাপ- জাবিরঃ মাশাল্লাহ – আলহামদুলিল্লাহ। আমারও পছন্দ হয়েছে। যদি আপনাদের কোন আপত্তি না থাকে তাহলে আমি আজকেই বিয়ে করতে চাই।
সংলাপ- মেয়ের বাবাঃ না, তা কিকরে হয়? আমার ছেলে একটিও বাড়িতে নেই। তাছাড়া পাত্রের ব্যপারে কোন কিছুই আমরা জানিনা। এভাবেতো আমি বিয়ে দিতে পারিনা। তাছাড়া যৌতুক দেওয়ার মতো টাকা আমার কাছে নেই।
সংলাপ – জাবির (নরম স্বরে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে):
চাচা, আমি সিলেটে একটি কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করি। আমি ধনী বা জমিদার পরিবারের কেউনা। আমাদের ভিটেমাটি ছাড়া আর কোন জায়গা জমি নেই। আমার ছোট ভাই অনেক আগেই বিয়ে করে ফেলেছে, তাই এলাকাতে বিয়ে করতে সমস্যা হচ্ছে। আমার বোনের দেবর আমাকে এখানে নিয়ে আসছে। আমার যা লোকানোর ছিল তা আমি বলে দিয়েছি। আমি কোনো যৌতুক নেব না, বরং আপনার মেয়ের বিয়ের সব খরচ আমি বহন করব। ইসলাম সহজ বিয়ের নির্দেশ দিয়েছে। আমি সেই পথেই চলতে চাই। আমি কোন ধরনের যৌতুক চাইনা আবার বেশি দেনমোহর দিয়ে বিয়ে করতে চাইনা, আমার সাধ্যমত দেনমোহরের বিনিময়ে বিয়ে করতে চাই।
ন্যারেশন:
তখন সমাজে যৌতুক যেন নিত্যদিনের বিষয় ছিল। কিন্তু জাবিরের কথায় সবাই চুপ হয়ে গেল। এমন মানুষ আজকাল খুব কমই দেখা যায়।
সংলাপ – মেয়ের মা (আস্তে, চোখ ভিজে):
বাবা, আমাদের এখন তেমন সামর্থ্য নেই। কিন্তু যদি তুমি সত্যিই যৌতুক না নাও… তবে হয়তো এটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই লেখা।
সংলাপ – মেয়ের চাচা:
আমরা খোঁজ খবর না নিয়ে বিয়ে দিতে ভয় পাই, তবু পাত্রের আচরণে খারাপ কিছু দেখলাম না। আর হুজুরতো ( জাবিরের বেয়াই) আমার অনেক দিনের চেনা। আমাদের সম্মতি আছে, কিন্তু একটাই শর্ত — মেয়েকে এখনই নিয়ে যাওয়া যাবে না। ছয় মাস পর, ইনশাআল্লাহ, বউভাতের পর পাঠাবো।
সংলাপ – জাবির:
আমি রাজি চাচা। ছয় মাস পরই আপনাদের মেয়েকে নিয়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ।
দৃশ্য ৪: আকদ ও বিয়ে
দৃশ্যঃ
মসজিদের ইমাম, কাবিননামা, দু’জন সাক্ষী, পাশে কিছু গ্রামবাসী।
কাবিনের পর পাশে রাখা সামান্য মিষ্টি আর এক গ্লাস পানি।
সংলাপ-ইমামঃ
আপনি কি ফারজানা আক্তারকে ১৫০০০০ টাকা দেনমোহর দিয়ে বিবাহ করিতে রাজি আছেন? যদি রাজি থাকেন তাহলে তিনবার কবুল বলুন।
সংলাপ-জাবিরঃ
জ্বি, কবুল
(তিনবার পুনরাবৃত্তি)
ন্যারেশন:
এভাবেই শেষ বিকেলে, গ্রামের লিচু বাগানের পাশে, এক অনাড়ম্বর পরিবেশে সম্পন্ন হলো এক পবিত্র সম্পর্ক। কোনো জাঁকজমক নয়, কোনো দাম্ভিকতা নয়—ছিল শুধু সততা, সরলতা আর ঈমানের ছোঁয়া।
দৃশ্য:
ফারজানা মাথা নিচু করে বসে আছে, পাশের ঘরে সবাই ফিসফিস করে কথা বলছে। বাইরে মাগরিবের আজান শুরু হয়েছে। সবাই নামাজে চলে গেলো।
ন্যারেশন:
সেই সন্ধ্যায় আজানের সুরে মিলেমিশে যাচ্ছিল এক নতুন জীবনের শুরু। শর্ত হলো—ছয় মাস পর ফারজানাকে শ্বশুরবাড়ি নেওয়া হবে।
দৃশ্য ৫: শেষ দৃশ্য (পর্ব–১ সমাপ্তি)
দৃশ্য:
বিয়ের পর সবাই একে একে বিদায় নিচ্ছে। জাবিরের হাতে ছোট ব্যাগ, চোখে অদ্ভুত এক শান্তি।
ফারজানা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে, ওড়নার আড়াল থেকে তাকিয়ে আছে — কারও মুখে কথা নেই। তাদেরকে বিদায় দিতে পাত্রী ছাড়া সবাই আসল।
ন্যারেশন (শেষ ভয়েসওভার):
সেদিন কেউ কিছু বলেনি। শুধু বাতাসে ভেসে ছিল এক নীরব প্রতিজ্ঞা—
‘এই সম্পর্ক হবে আল্লাহর নামে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।’
কিন্তু জাবির জানত না—এই নীরব প্রতিজ্ঞাই একদিন হয়ে উঠবে তার জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।
নোটঃ
ছোট কিছু টেকনিক্যাল সাজেশন (যদি ভিডিও তৈরি করো)
-
ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক (BGM):
নরম স্ট্রিং/পিয়ানো প্যাড ব্যবহার করো, তিলাওয়াতের সাউন্ডের সাথে যেন ওভারল্যাপ না করে।
বিয়ের দৃশ্যে হালকা বাঁশির (flute) সুর দিলে নরম আবেগ বাড়বে। -
কালার টোন:
সিলেট অংশে ঠান্ডা নীল আলো (শহরের ব্যস্ততা বোঝাতে),
আর নাটোর অংশে উষ্ণ সোনালি টোন (গ্রামের আবেগ বোঝাতে)। -
ভয়েসওভার টোন:
ভয়েসওভার যেন কোমল, গম্ভীর ও ইসলামিক ভাবসম্পন্ন হয়—
খুব বেশি নাটকীয় না, বরং চিন্তাশীল।