নিরাপদ সফরের দোয়া অর্থ সহ

নিরাপদ সফরের দোয়া অর্থ সহ
নিরাপদ সফরের দোয়া অর্থ সহ

নিরাপদ সফরের জন্য দোয়া মুসলিমদের দৈনন্দিন জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুশীলন। সফরের সময় আল্লাহর সাহায্য কামনা করে দোয়া করা যায় যাতে সফরটি নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ এবং মঙ্গলময় হয়। যে ব্যক্তি সফর করেন শুধু তিনিই দোয়া করেননা- তাকে যারা বিদায় জানান তারাও আল্লার কাছে সফরকারীর জন্য মন খুলে দোয়া করে থাকেন। আজকের এই ব্লগে আমরা জানব – নিরাপদ সফরের দোয়া অর্থ সহ, নিরাপদ ভ্রমণের দোয়া আরবি বাংলা ও ইংরেজি। আরো জানব সফরের সময় দোয়া করলে – সফরের দোয়া কবুল হয় কিনা। কুরআন ও হাদিস থেকে রেফারেন্স দিব। আমাদের সাথেই থাকুন, যদি আপনি ভ্রমণে বা সফরে থাকা অবস্থায় আমাদের এই পোষ্টটি পড়ে থাকেন – তাহলে আপনার দোয়াতে আমাদেরকে শরিক করুন, আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।

নিরাপদ সফরের দোয়া অর্থ সহ কুরআন থেকে

নিচে কুরআন নিরাপদ সফরের দোয়া দেওয়া হল, আপনাদের যদি অন্য কোন দোয়া জানা থাকে , তাহলে কমেন্ট বক্সে জানান, আমরা পোষ্টে এড করে দিব। সূরা আনকাবুতের ২০ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ আমাদেরকে সফরের নির্দেশ দিয়েছেন।

আরবিঃ قُلۡ سِیۡرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ فَانۡظُرُوۡا کَیۡفَ بَدَاَ الۡخَلۡقَ ثُمَّ اللّٰهُ یُنۡشِیٴُ النَّشۡاَۃَ الۡاٰخِرَۃَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ

বাংলা উচ্চারণঃ

“কুল সীরু ফি আল-আর্দি ফানযুরু কাইফা বাদা’ আল-খালক। থুম্মা আল্লাহু ইউনশি’ উন-নাশাত আল-আখিরাহ। ইন্নাল্লাহা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর।”

বাংলা অর্থঃ

 ‘তোমরা পৃথিবীতে সফর করো এবং দেখো, কিভাবে আল্লাহ সৃষ্টির সূচনা করেছেন, এরপর আল্লাহ পুনরায় পরকালের জীবন সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান”

English: “Travel through the earth and see how Allah has initiated creation, then Allah will bring about the creation of the Hereafter. Indeed, Allah is capable of everything.”

এই আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে পৃথিবী ভ্রমণ করে তাঁর মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্ব দর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন, তাই কোথাও সফরে গেলে বা ভ্রমণে গেলে এই আয়াত পড়া যায়।

নিরাপদ সফরের দোয়া আরবি ও বাংলা অর্থ

 আরবিঃ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

বাংলা উচ্চারণঃ “বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম”

বাংলা অর্থঃ “আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময়, পরম দয়ালু।”

English: “In the name of Allah, the Most Gracious, the Most Merciful.”

সূরা ফাতিহার প্রথম আয়াত এবং কুরআনের প্রতিটি সূরা আরম্ভ হয় এই আয়াত দিয়ে, তাই কোথাও যাত্রা করলে এই আয়াত পড়ে ঘর থেকে বের হওয়াই উত্তম।

আরবিঃ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

বাংলা উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আ’লামিন”

বাংলা অর্থঃ  “সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সমস্ত বিশ্বব্রাহ্মাণ্ডের পালনকর্তা”

In English: “All praise is due to Allah, the Lord of all the worlds.”

এই আয়াতে আল্লাহর প্রশংসা করা হয়েছে, তাই সফরে বের হওয়ার সময় এই আয়াত পড়া উত্তম।

আরও অনেক দোয়া পড়া হয় যেগুলো কুরআন থেকে প্রমাণিত নয় কিন্তু মুসলিম উম্মাহ সচরাচর ব্যবহার করে- নিচে কয়েকটি দিলামঃ

“اللّهُمَّ إِنَّا نَسْتَوْدِعُكَ فِي سَفَرِهِنَا هَذَا”

“হে আল্লাহ! আমরা আমাদের এই সফর তোমার কাছে সঁপে দিলাম।”

“O Allah! We entrust this journey of ours to You.”

এটি সাধারণত সফরের শুরুতে পড়া হয়, যেখানে সফরকারীরা তাদের সমস্ত কিছু আল্লাহর কাছে সঁপে দেয় যাতে সফর নিরাপদ ও মঙ্গলময় হয়।

“اللّهُمَّ صَحِّبْنَا فِي سَفَرِهِنَا”

“হে আল্লাহ! আমাদের এই সফরে আমাদের সঙ্গী হও।”

“O Allah! Be our companion in this journey.”

এই দোয়া সফরের নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করে। এটি সফরের সময় আল্লাহর সঙ্গ প্রার্থনা করা হয়।

“اللّهُمَّ اجْعَلْنِي فِيهِ مِنْ أَهْلِ سَعَادَتِهِ وَالْبَرَكَةِ”

“হে আল্লাহ! এই সফরে আমাকে তার সুখ ও বরকত দিয়ে পূর্ণ করুন।”

“O Allah! Fill this journey of mine with its happiness and blessings.”

এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে সফরকারীরা আল্লাহর কাছ থেকে সুখ এবং বরকত কামনা করে।

“اللّهُمَّ إِنَّا نَسْتَوْدِعُكَ فِي سَفَرِهِمْ وَأَمَانَتِهِمْ”

“হে আল্লাহ! আমরা তাদের সফর এবং তাদের আমানত তোমার কাছে সঁপে দিলাম।”

“O Allah! We entrust their journey and their trust to You.”

এটি সাধারণত কাউকে বিদায় দেওয়ার সময় পড়া হয়, যেখানে আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা এবং রক্ষা কামনা করা হয়।

“اللّهُمَّ اجْعَلْهُ سَفَرًا آمِنًا مُّبارَكًا”

“হে আল্লাহ! এটিকে একটি নিরাপদ এবং বরকতপূর্ণ সফর বানিয়ে দাও।”

“O Allah! Make this journey safe and blessed.”

এটি বিশেষভাবে সফরের নিরাপত্তা ও বরকত কামনা করার জন্য বলা হয়।

সফরের দোয়া কবুল হয় কিনা দলিল

সফরের দোয়া কবুল হওয়ার বিষয়ে কিছু হাদিস এবং ইসলামিক শিক্ষা রয়েছে। সফরের সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিছু হাদিসে সফরের দোয়া কবুল হওয়ার বিষয়টি উল্লেখিত হয়েছে।

নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

“সফরের মধ্যে দোয়া কবুল হয়, এবং তা বিশেষভাবে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য।”
(সহীহ মুসলিম)

“তিনটি প্রকারের দোয়া রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ তা কবুল করেন। তা হলো, আল্লাহর পথে যুদ্ধরত ব্যক্তির দোয়া, নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া এবং সফরের সময় দোয়া।”
(তিরমিজি)

“যে ব্যক্তি সফর শুরু করার আগে দোয়া করবে, তার সফর আল্লাহর সাহায্য ও নিরাপত্তা দ্বারা পূর্ণ হবে।”
(সহীহ বুখারি)

এই হাদিসগুলো সফরের দোয়া কবুল হওয়ার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে। তাই, সফরের শুরুতে আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহর সাহায্য ও সুরক্ষা কামনা করা সুন্নত।

সফরের দোয়া বা ভ্রমণের দোয়া সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে সফরে বের হয়, আল্লাহ তার পেছনে থাকা পরিবার-পরিজনকে সুরক্ষা প্রদান করেন।”
(সহীহ মুসলিম)

“সফরের মধ্যে দোয়া কবুল হয়, এবং তা বিশেষভাবে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য।”
(সহীহ মুসলিম)

“যখন তোমরা সফর করো, তাহলে আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা কামনা করো। সফরের সময় দোয়া করা বিশেষভাবে মঙ্গলজনক।”
(সহীহ বুখারি)

“সফরের সময় যে দোয়া পড়বে, আল্লাহ তাকে পুণ্য দান করবেন এবং তার সফর নিরাপদ হবে।”
(তিরমিজি)

“তোমরা সফরে যাওয়ার আগে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে দোয়া পড়ো।”
(সহীহ বুখারি)

এই হাদিসগুলো সফরের সময় আল্লাহর সাহায্য, নিরাপত্তা, এবং দোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের শিক্ষা দেয়। সফরের শুরুতে দোয়া পড়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সাহায্য কামনা করি এবং আমাদের সফরকে নিরাপদ এবং বরকতময় করার চেষ্টা করি।

সফরকারীর জন্য আত্বীয় স্বজনরা যেসব দোয়া পড়েন

“আল্লাহর হাওলা” (اللهَ حَوْلَةٌ) একটি আরবী শব্দ, যার অর্থ হলো “আল্লাহর সাহায্য বা আশ্রয়”। এটি মূলত বিদায় দেওয়ার সময় বলা হয়, যাতে বলা হচ্ছে, “আল্লাহ আপনার সহায় হোন”, বা “আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করুন”।

এটি মূলত একটি দোয়া, যেখানে আপনি কাউকে আল্লাহর সাহায্য ও রক্ষা কামনা করছেন। যখন কেউ সফর করতে যায় বা বিদায় নেয়, তখন আমরা এই শব্দ ব্যবহার করে তার জন্য আল্লাহর দয়া, নিরাপত্তা ও আশ্রয় কামনা করি। এটি একজন মুসলিমের আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং আল্লাহর সহায়তার জন্য একটি সুন্দর প্রার্থনা।

আরও পড়ুনঃ

আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী

বাংলাদেশে ইসলামের আগমন

স্বপ্নে অন্যের বিয়ে দেখলে কি হয়

এশার নামাজ কয় রাকাত? এশার নামাজের সময়

FAQ: সফরের দোয়া সম্পর্কিত

১. সফরের দোয়া কোনটি?

“اللّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ تَضِلَّنِي أَوْ تَضِلَّنِي أَوْ تَزِلَّنِي أَوْ أَزِلَّنِي أَوْ أَجْهَلَ عَلَيَّ أَوْ تَجْهَلَ عَلَيَّ”

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই, যেন আমি পথভ্রষ্ট না হই, কিংবা কেউ আমাকে পথভ্রষ্ট না করে, কিংবা আমি কোনো অজ্ঞানতার দিকে ধাবিত না হই।”

২. রাস্তার দোয়া কী?

“اللّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هَذَا الطَّرِيقِ”

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি এই পথের বিপদ থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।”

৩. কেউ সফরে গেলে কি বলতে হয়?

“فِي أَمَانِ اللّهِ” (ফি আমানিল্লাহ)

অর্থ: “আল্লাহর আশ্রয়ে থাকো।”

৪. নদীপথের দোয়া কী?

“اللّهُمَّ سِيرَانَا هَذَا وَفِي سَفَرِهِمْ فِيهِ بَرَكَةً”

অর্থ: “হে আল্লাহ! এই আমাদের যাত্রাকে সহজ করে দিন এবং এতে বরকত দিন।”

৫. فِي أَمَانِ اللّهِ এর উত্তরে কী বলতে হয়?

“إِنْ شَاءَ اللّهُ” (ইন শা আল্লাহ)

অর্থ: “আল্লাহ চাইলে।”

শেয়ার করুন

You may also like...

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।