তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

আল্লাহর প্রিয় বা1ন্দা

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে আজকের এই পোষ্ট। তাহাজ্জুদ নামাজ হল ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত যা গভীর রাতে আদায় করা হয়। এটি মু’মিনের ঈমানকে দৃঢ় করে, আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম, এবং জান্নাতের পথ সুগম করে। 

এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন- তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণ।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়, তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল, তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত, তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কোন দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়, তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত, তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা পড়ার নিয়ম ও তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত এবং বিভিন্ন ইসলামি স্কলারদের ব্যাখ্যা।


🕋 তাহাজ্জুদ নামাজ কী?

তাহাজ্জুদ শব্দটি আরবি “হুজুদ” শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে ঘুম থেকে জেগে ওঠা। ইসলামী পরিভাষায়, রাতের ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত হওয়াকে তাহাজ্জুদ বলা হয়।

📌 উপকারিতা:

  • আত্মার শুদ্ধতা বৃদ্ধি করে
  • গোনাহ মাফের মাধ্যম
  • হৃদয়কে আল্লাহর প্রতি নম্র করে
  • দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জনের পথ

“রাতের কিছু অংশে নামায পড়ুন—এটা তোমার জন্য অতিরিক্ত ইবাদত হবে। তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসিত অবস্থায় পুনরুত্থান করবেন।”
সূরা আল-ইসরা: ৭৯


তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত

🕌

نَوَيْتُ لِصَلاَةِ التَّهَجُّدِ سَنَةً لِلَّهِ تَعَالَى

নওইতু লিসালাতিল তাহাজ্জুদ সানাতান লিল্লাহি তা’আলা

 

আমি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম।

 


তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত

🕌
=

আমি নিয়ত করলাম দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার, আল্লাহর উদ্দেশ্যে, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য

 
 

🕯️ তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত:


তাহাজ্জুদ নামাজ কিয়ামুল লাইল এর অন্তর্ভুক্ত। এটি নবী (সাঃ) এবং আল্লাহভীরুদের অভ্যাস ছিল। কুরআনে আল্লাহ এই নামাজকে প্রশংসিত করেছেন:

তাহাজ্জুদ নামাজ হল একটি বিশেষ নফল ইবাদত, যা রাতের গভীরে ঘুম ভেঙে একান্তভাবে আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যম। তাহাজ্জুদের ফজিলত এতই বেশি যে কুরআন ও হাদীসে এর ব্যাপারে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে।

কুরআনে বলা হয়েছে, “রাতের কিছু অংশে নামাজে দাঁড়াও — এটি তোমার জন্য নফল, হয়তো তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত মর্যাদায় পৌঁছে দেবেন” (সূরা ইসরা: ৭৯)।

রাসূলুল্লাহ ﷺ তাহাজ্জুদ নামাজকে তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বানিয়ে নিয়েছিলেন, এবং বলেন, “রাত্রির নামাজ শ্রেষ্ঠ নামাজ, তোমরা যতটা সম্ভব তা আদায় করো।” এই নামাজে চোখের অশ্রু, অন্তরের খাঁটি আরাধনা এবং গভীর দোয়া কবুল হওয়ার মাধ্যম হয়।

তাহাজ্জুদের মাধ্যমে গুনাহ ক্ষমা হয়, অন্তরে প্রশান্তি আসে এবং দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই এই নামাজ আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুযোগ।


⏰ তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

তাহাজ্জুদ নামাজের নির্ধারিত সময় হল এশার নামাজের পর থেকে শুরু করে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত।

🕰️ সময় বিভাজন:

  1. শুরু: এশার নামাজের পর থেকে
  2. সেরা সময়: রাতের শেষ তৃতীয় অংশ
  3. শেষ: ফজরের আযানের আগে

“আমাদের রব প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন: কে আছে যে আমাকে ডাকে, আমি তার ডাকে সাড়া দেই?”
— সহীহ বুখারী: ১১৪৫


🧎 তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

🔸 প্রস্তুতি:

  • আগে থেকে নিয়ত স্থির রাখা
  • হালকা ঘুম নেওয়া (তাহাজ্জুদের ফজিলত বেশি হয় ঘুম থেকে উঠে পড়লে)
  • পবিত্র অবস্থায় থাকা (ওযু করা)

🔹 রাকাতের সংখ্যা:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণত ৮ বা ১০ রাকাআত পড়তেন। কেউ চাইলে ২ রাকাআত করেও পড়তে পারে।

বিন্যাস:

  • ২ রাকাআত করে সালাম ফেরানো উত্তম
  • শেষে ১ বা ৩ রাকাআত বিতর পড়া সুন্নাত

🔹 নিয়ত:

উচ্চারণ:

নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা সালাতাত তাহাজ্জুদি রাক'আতাইনি সুন্নাতাল্লাহি তা'আলা

অর্থ: “আমি নিয়ত করলাম আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার।”

🔹 কিরাত :

  • প্রথম রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও সূরা আল-কাফিরূন
  • দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও সূরা ইখলাস পড়া মুস্তাহাব

📜 কুরআন ও হাদীসে তাহাজ্জুদের গুরুত্ব

📖 কুরআন থেকে:

“তারা রাতে অল্পই ঘুমায় এবং প্রত্যুষে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে।”
সূরা আয-যারিয়াত: ১৭-১৮

“মুমিনগণ রাতের সময়ে তাদের বিছানা ছেড়ে উঠে, তারা ভয়ে ও আশায় তাদের রবকে ডাকতে থাকে।”
— সূরা আস-সাজদা: ১৬

🕌 হাদীস থেকে:

“তোমাদের মধ্যে উত্তম সে ব্যক্তি যে রাতে উঠে কুরআন তিলাওয়াত করে ও ইবাদত করে।”
— তিরমিযী: ৩৫৪৯

“তাহাজ্জুদ নামাজে দাঁড়ানো তোমার গোনাহগুলো মোচন করে দেয় এবং দোয়া কবুল হওয়ার মাধ্যম।”
— সহীহ মুসলিম


🧠 তাহাজ্জদের নামাজ নিয়ে ইসলামি স্কলারদের মতামত

ইমাম গাজ্জালী (রহ.):

“তাহাজ্জুদ হচ্ছে মু’মিনদের জন্য আত্মার খাবার। যিনি এই নামাজ পড়েন, তার অন্তর আল্লাহর নূরে আলোকিত হয়।”

শাইখ ইবনে বায (রহ.):

“যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদ পড়ে, সে আল্লাহর বিশেষ রহমতের উপযুক্ত হয়। এ ইবাদত ঈমান ও তাকওয়া বৃদ্ধিতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে।”

ড. ইয়াসির কাদি:

“Consistent tahajjud transforms your relationship with Allah. It brings a calmness that no worldly gain can provide.”

মুফতি তাকি উসমানী:

“তাহাজ্জুদ শুধুই রাতের নামাজ নয়, এটি আপনার আত্মাকে গঠনের এক বিশেষ মাধ্যম। এটি মনের শান্তির চাবিকাঠি।”


✅ তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

  • রাতে ঘুমানোর আগে নিয়ত করুন তাহাজ্জুদের
  • ভারী খাবার পরিহার করুন
  • ফজরের ৩০–৪০ মিনিট আগে ঘুম থেকে উঠুন
  • যদি সম্ভব না হয়, অন্তত এশার পর ২ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়ুন

📌 জেনে রাখা ভালো:

  • দৈনিক না পারলেও সপ্তাহে ২–৩ দিন চেষ্টা করুন
  • তাহাজ্জুদের পর মন থেকে দোয়া করুন — এই সময়ে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বেশি
  • কুরআন তিলাওয়াতের জন্য সময় রাখুন তাহাজ্জুদের সাথে

🤲 তাহাজ্জুদের পথে ফিরে আসুন 

তাহাজ্জুদ নামাজ মুমিনের জীবনে আত্মিক প্রশান্তি, দোয়া কবুল ও গোনাহ মোচনের এক বিশুদ্ধ উপায়। এটি কেবল ইবাদত নয় — বরং একজন মুমিনের আল্লাহর প্রতি ভালবাসা, ভরসা ও সম্পর্ক দৃঢ় করার নিরব সাক্ষ্য।

আশাকরি আপনি জেনেছেন- তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম কি, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত কিভাবে পড়তে হয়, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণ শিখে ফেলেছেন, তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ভালো করে মনে রাখবেন। 

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল তা ইতিমধ্যে জেনেছেন, তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত জেনেছেন, তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কোন দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয় – এটি হয়তো আপনার কোন উপকারে আসতে পারে ও তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে আপনি অবগত হয়েছেন। 

আজ থেকেই শুরু করুন। ছোট করেই হোক, কিন্তু নিয়মিত হোক। তাহাজ্জুদের মাধ্যমে ফিরে আসুন আপনার রবের নিকট — ইনশা আল্লাহ, আপনি বদলে যাবেন।

আরও পড়ুনঃ 

এশার নামাজ কয় রাকাত? এশার নামাজের সময়

 

তাহাজ্জুদ নামাজ সংক্রান্ত প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি (FAQ)

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল?

তাহাজ্জুদ নামাজ নফল নামাজ। এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নয়, তবে রাসূল ﷺ নিয়মিত আদায় করতেন, তাই এটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ইবাদত।

তাহাজ্জুদের নিয়ত আরবিতে কিভাবে করতে হয়?

নিয়ত আরবিতে:
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ سُنَّةَ التَهَجُّدِ رَكْعَتَيْنِ لِلّٰهِ تَعَالٰى

তাহাজ্জুতের নামাজ পড়ার নিয়ম কী?

রাতের শেষ অংশে ঘুম থেকে উঠে ওজু করে ২ বা ৪ রাকাত করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে হয়। সর্বোচ্চ ৮ বা ১২ রাকাত পড়া যায়। নামাজ শেষে দোয়া করা উত্তম।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কোন দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়?

তাহাজ্জুদের পর দোয়া কবুল হওয়ার সময়। আপনি আপনার মাতৃভাষায় বা এই দোয়া পড়তে পারেন:
اللّٰهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
(আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা)

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত?

সর্বনিম্ন ২ রাকাত এবং সর্বোচ্চ ৮ বা ১২ রাকাত পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যায়।

রাত সাড়ে তিনটায় তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যাবে কি?

হ্যাঁ, রাত সাড়ে তিনটায় পড়া যায়। শেষ রাতের সময় (ফজরের পূর্বে) তাহাজ্জুদের উত্তম সময়।

তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়া উত্তম?

যেকোনো কুরআনের সূরা পড়া যায়। তবে সূরা মুজ্জাম্মিল, সূরা আল-ইখলাস, সূরা ফাতিহা, সূরা বাকারাহর কিছু আয়াত উত্তম।

তাহাজ্জুদে কি নামাজ কবুল হয়?

জী হ্যাঁ, তাহাজ্জুদ একটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ সময়ে আদায় হয়, তখন দোয়া ও ইবাদত অধিক কবুল হয়।

তাহাজ্জুদে সূরা ইয়াসিন পড়া যাবে কি?

হ্যাঁ, সূরা ইয়াসিন পড়া যাবে। এটি কুরআনের অংশ এবং কুরআনের যেকোনো অংশ পড়া সওয়াবের কাজ।

নবী সাঃ কিভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন?

রাসূল ﷺ রাতের শেষ ভাগে ঘুম থেকে উঠে ওজু করে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ এবং ৩ রাকাত বিতর আদায় করতেন। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে কিয়াম ও সেজদায় থাকতেন।

তাহাজ্জুদ নামাজে কি দোয়া কবুল হয়?

তাহাজ্জুদের সময় আল্লাহ্‌ নিজেই আহ্বান করেন কে দোয়া করছে, আমি তা কবুল করব। তাই দোয়া কবুলের উত্তম সময় এটি।

তাহাজ্জুদ আরবিতে কিভাবে লিখতে হয়?

তাহাজ্জুদ আরবিতে লিখা হয়: التَّهَجُّد

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *